Karar Oi Louho Kapat Controversy

রহমানের সুরে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি সরান, আর্জি নজরুল-পৌত্রের

ছবির নির্মাতারা এখনও মুখ খোলেননি। রহমান কী কারণে নজরুল ইসলামের গানে নিজের সুর বসালেন, এ বিষয়েও এখনও সদুত্তর মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪২
Share:

কাজী নজরুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি সরানোর আর্জি জানালেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতি কাজী অনির্বাণ। ছবিটির শুরুতেই কৃতজ্ঞতাভাজনদের তালিকায় অনির্বাণ এবং তাঁর মা প্রয়াত কল্যাণী কাজীর নাম রয়েছে।

Advertisement

নজরুল ইসলামের ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধের বড় ছেলে অনির্বাণ শনিবার বলেন, “২০২১ সালে পিপ্পার নির্মাতা রয় কপূর ফিল্মসের সঙ্গে আমার মায়ের লিখিত চুক্তি হয়। আমি তার সাক্ষী ছিলাম। চুক্তিতে ওঁরা গানটি পুরো বা খানিকটা ব্যবহারের অনুমতি চান। এ আর রহমান গানটির যন্ত্রানুষঙ্গ সৃষ্টি করবেন, আরও অনেকের কাছে গানটি পৌঁছবে ভেবে মা খুব আনন্দ পেয়েছিলেন। সেই গান এমন যন্ত্রণার হবে আমরা ভাবিইনি!” কালীপুজোর পরেই অনির্বাণ ছবিটির নির্মাতাদের সরাসরি ইমেল বা হোয়াটস্‌অ্যাপে গানটি সরানোর কথা বলতে চান। তিনি বলেন, “গানটি সরাতে হবে। ছবিতে আমার বা মায়ের নাম রাখা চলবে না। আর আমার মা কখনও গানটির সুর বিকৃত করার অনুমতি দেননি। ছবির নির্মাতাদের এর খেসারত দিতে হবে।”

অনির্বাণের সহোদর কাজী অরিন্দম অবশ্য কোনও চুক্তির বিষয়ে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ গান সহ্য করা যায় না! আমার জ্যাঠামশাই কাজী সব্যসাচীর কন্যা খিলখিল বাংলাদেশ থেকে শিগগির কলকাতায় আসছেন! আমরা ভাইবোনেরা বিষয়টি নিয়ে এর বিরুদ্ধে পরের পদক্ষেপ ঠিক করব।” নজরুলের মৃত্যুর ৬০ বছর হবে ২০৩৬ সালে। নজরুলের পরিবারের দাবি, তত দিন তাঁর সৃষ্টির স্বত্ব, পরিবার তথা উত্তরাধিকারীদেরই হাতে।

Advertisement

নজরুলের নাতনি অনিন্দিতা কাজীর বক্তব্য, তাঁর মা কল্যাণী কাজী ২০২১ সালে গানটি ‘অবিকৃত রেখে’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই প্রসঙ্গেই নিউ জার্সি প্রবাসী অনিন্দিতা ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রশ্ন উঠছে, পরিবার থেকে অনেক টাকা নিয়ে গানটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালে কি এগ্রিমেন্ট হয়েছিল সেটা জানা খুব প্রয়োজন,তাহলে সব বিতর্কের অবসান হবে। এবং যারা এগ্রিমেন্ট এর বিপক্ষে গিয়ে এই কাজটি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।... মিডিয়া মারফত জানতে পারি এগ্রিমেন্ট এর কাগজ কাজী অনির্বাণের কাছে আছে। পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে আমি সেটা দেখতে চাই, পেতে চাই ও বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই।’ (বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত)

ছবির নির্মাতারা এখনও মুখ খোলেননি। রহমান কী কারণে নজরুল ইসলামের গানে নিজের সুর বসালেন, এ বিষয়েও এখনও সদুত্তর মেলেনি। রহমানের ঘনিষ্ঠমহল জানায়, শনিবার মধ্যরাত অবধি তিনি স্টুডিয়োয় রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত। এখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব নয়।

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জড়ানো, সবার প্রিয় গানের বিকৃতিতে ব্যথিত কবি জয় গোস্বামীও। রাজ্য সরকারের নজরুল আকাদেমির চেয়ারপার্সনও তিনি। তবে আকাদেমির তরফে নয়, নজরুলের পাঠক, গানের শ্রোতা হিসেবেই বিষয়টি নিয়ে জয় মুখর। বলছেন, “গানটি এখনও শুনিনি। তবে নজরুলের গানে নিজের সুর আরোপ তো এক ধরনের হানাদারি। এটা ঠিক নয়। নজরুলের গানটি পরাধীন দেশের ইতিহাসে মিশে। দীর্ঘ সময়যাত্রায় উত্তীর্ণ একটি গান। রহমান অসম্ভব প্রতিভাবান। তিনি নিজের সুর সৃষ্টির মধ্যে থাকুন, কিন্তু নজরুলের বসানো সুরে কেন অনুপ্রবেশ করছেন!” তবে নজরুল আকাদেমির বৈঠক না-বসা পর্যন্ত তাদের তরফে কিছু বলা যাবে না বলে জানান জয়।

সমাজমাধ্যমে দু’বাংলার বাঙালিদের মধ্যে প্রতিবাদের আবহ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় গণতান্ত্রিক সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘও নজরুলের বিপ্লবী সঙ্গীত চেতনার অসম্মানে সরব। শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চের তরফে বিভাস চক্রবর্তী, দিলীপ চক্রবর্তীরা রহমানের সুর আরোপ ‘ভারতবাসীর আবেগের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ’ বলে বিবৃতি দিয়েছেন।

১৯২১-এ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবীর কথায় ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ লেখেন নজরুল। পরে সুর দেন। গিরিন চক্রবর্তীর কণ্ঠে তা প্রথম প্রকাশিত হয়। এ দিন হুগলি জেলের সামনে নজরুলের মূর্তি ঘিরে পোস্টার সেঁটে প্রতিবাদ জানায় চুঁচুড়ার একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা। নজরুলের ভাইয়ের নাতনি সোনালি কাজীর সংস্থা আসানসোলে প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন