মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী সংঘাত আরও বাড়ল। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে বুধবার আরও জোরালো ভাষায় মুখ খুললেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এ দিন বিশেষ কিছু না বললেও রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী রীতিমতো কড়া সুরে ‘বিজেপির প্রতিনিধি’ রাজ্যপালকে বিদ্ধ করেছেন।
রাজ্যের তরফে নালিশের চিঠি পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপালও। পাশাপাশি পাল্টা বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তোলা অভিযোগই বরং তাঁর পদের পক্ষে অপমানকর। কারণ, গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কেন্দ্রের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি রাজ্যপাল নিয়োগ করেন। তাই তাঁর কী করণীয়, তা তিনি কারও কাছে শিখবেন না।
এ দিন নবান্নে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বিজেপির তোতাপাখি।’’ তার আগে সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে যদি উনি অনুতপ্ত না হন, তা হলে কঠিন পথে যাব আমরা।’’ সন্ধ্যায় এবিপি আনন্দে শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই দাবি তাঁদের দলের ঘোষিত অবস্থান নয়। আর রাজ্যপাল সংক্রান্ত প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘এ সব বিষয় নিয়ে আমার মুখ বেশি খোলাবেন না।’’
আরও পড়ুন: ঘরছাড়া অন্তঃসত্ত্বাদের আশ্রয় এখন কওসর-অসীমরাই
পারস্পরিক এই উত্তাপের মধ্যে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী দু’জনকেই এ দিন ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজনাথ তাঁদের দু’জনকেই বলেছেন, ‘তিক্ততা আর বাড়তে না দিয়ে নিজেরা বিষয়টি মিটিয়ে নিন’।
রাজ্যপাল অবশ্য এ দিন এক ধাপ এগিয়ে রাজভবন থেকে প্রচারিত বিবৃতিতে সরকারের ‘দায়িত্ব’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরা জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে রাজ্যে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে মনোযোগ দিলে ভাল হয়।
বাদুড়িয়ায় হাঙ্গামার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপাল মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করার পরেই নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে বিরোধ মাথাচাড়া দেয়। মমতার অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে অপমানজনক ভাবে কথা বলেছেন, হুমকিও দিয়েছেন। কেশরীনাথের কথাবার্তা ‘বিজেপির ব্লক সভাপতির মতো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর পরেই বিবৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন রাজ্যপাল। বুধবার পার্থবাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজ্যপাল কি বিজেপির মুখপাত্র? উনি তো আইনজ্ঞ। উনি কী ভাবে এক্তিয়ার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘যত উঁচু মানেরই লোক হোন না কেন, তাঁকে সাবধান করব। বিজেপির কথা শুনে উনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে হুমকি দিলেন। আমরাও তো অনেক চিঠি দিয়েছি ওঁকে। কখনও মুখ খোলেননি তো উনি’’
বিকেলে আসে রাজভবনের বিবৃতি। তাতে বলা হয়, ‘‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিবৃতি সম্পর্কে রাজ্যপাল অবগত। রাজ্যপাল দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছেন, এটা আসলে রাজ্য সরকারের ত্রুটি চাপা দেওয়ার ও মূল যে বিষয়, সেই আইনশৃঙ্খলা থেকে মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। নিজের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রাজ্যপাল পুরোপুরি সচেতন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর কারও কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ রাজ্যপাল এ দিন আবারও জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারই সঙ্গে যোগ করা হয়, ‘‘এর একমাত্র উদ্দেশ্য, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ‘ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল’ করা।’’
এই বিবৃতির পরেই সন্ধ্যায় নবান্নে মুখ খোলেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত, রাজ্যপাল কেন্দ্রের মনোনীত। আলু আর আলুবখরা কি এক?’’ এই রাজ্যপালকে সরানোর জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দিচ্ছেন কি? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘এখনই ও সব ভাবছি না। আর পদত্যাগ চেয়ে কী হবে। বিজেপি মনোনীত রাজ্যপালই তো আসবেন!’’
মমতার পাশে দাঁড়িয়ে দিল্লিতে এআইসিসির মুখপাত্র সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘সরকার যখন বাদুড়িয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তখন রাজ্যপাল তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন!’’ আপের মুখপাত্র আশুতোষ বলেন, ‘‘দিল্লির সরকারের মতো পশ্চিমবঙ্গের সরকারকেও ভাঙার জন্য রাজ্যপালকে দিয়ে চক্রান্ত চলছে।’’