পুরস্কার: এক পড়ুয়ার সঙ্গে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। —নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিবেশ সম্পর্কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩তম সমাবর্তনে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সোমবার সমাবর্তন মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও বেশি সজাগ থাকা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কেমন হচ্ছে, সে-দিকে নজর তো রাখতেই হবে। পড়াশোনার আগে-পরে ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে, নজর দেওয়া দরকার সে-দিকেও।’’
সমাবর্তন মঞ্চে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সামনেই আচার্যের এই মন্তব্য কেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে যায় অচিরেই। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুরেই যত গোলমাল কেন? মদ-মাদক সেবন থেকে শুরু করে বহিরাগতের উৎপাত পর্যন্ত নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার জন্য বারবার আঙুল ওঠে যাদবপুরের দিকে। সেখানকার বিশৃঙ্খলা দৃষ্টান্ত হিসেবে উঠে এসেছে বিএডের একটি পাঠ্যপুস্তকেও। বিতর্ক চলছে সেই ঘটনা নিয়েও। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশের মতে, যাদবপুরে সাম্প্রতিক অতীতের কিছু গোলমালের দিকেই এ দিন সমাবর্তন মঞ্চে আঙুল তুলেছেন আচার্য-রাজ্যপাল। পঠনপাঠনে ওই প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার জন্য পাঠ-পরিবেশের দিকে নজর না-দিলেই যে নয়, সেই বার্তা দেওয়ার জন্য তাঁকে বেছে নিতে হয়েছে সমাবর্তনের মঞ্চ।
চলতি বছরেই ছাত্র আন্দোলনের জন্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারেননি উপাচার্য, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সির মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সমাবর্তন করতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে, নন্দন প্রেক্ষাগৃহে। যাদবপুরে জল অতটা না-গড়ালেও সেখানকার পরিবেশ নিয়ে আচার্যও যে চিন্তিত, তাঁর এ দিনের মন্তব্য তারই প্রতিফলন বলে শিক্ষা শিবিরের মত। তাদের বক্তব্য, পড়াশোনায় উৎকর্ষের সঙ্গে বিশৃঙ্খলাতেও এক বন্ধনীতে চলে এসেছে যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে তো কখনও ক্যাম্পাসের ভিতরে মদ-মাদক সেবন নিয়ে। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য এবং অন্য আধিকারিকেরা ঘেরাও হয়েছেন বারবার। বিশৃঙ্খলা তুঙ্গে ওঠে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময়। গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে মদ্যপ অবস্থায় বহিরাগতদের ঢুকে পড়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ, এখনও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। কেন হয়নি, সেই প্রশ্ন তো উঠছেই। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী থেকে আচার্য-রাজ্যপাল পর্যন্ত সকলেই যাদবপুরের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও সেখানকার কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে যথেষ্ট তৎপর নন কেন?
‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কিছু গন্ডগোল হয়, তা হলে আমরা যা করার, আইন মেনেই করব,’’ বলছেন যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু।
এ দিন সমাবর্তনে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগের ৮৫৪, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি বিভাগের ১২৪৯ এবং বিজ্ঞান বিভাগের ৩৪১ জন পড়ুয়াকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। স্নাতকোত্তর স্তরে ডিগ্রি পান কলা বিভাগের ৬৭৩, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি বিভাগের ৪৪৪ এবং বিজ্ঞান বিভাগের ২২১ জন ছাত্রছাত্রী।