দাবি তৃণমূল কর্মীদের

ক্ষমতা পেয়েই দুর্নীতি মোয়াজ্জেমের

অশান্তির সূত্র তৈরি হয়েছিল বৃহস্পতিবার থেকে। শেষমেশ গোলমাল পাকল রবিবার রাতে। শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে চলে আসা কোন্দলে প্রাণ হারালেন তিন জন। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দলের খণ্ডঘোষের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে মনির ডেরা থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০০:৪১
Share:

বাঁ দিকে, খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে চলছে পুলিশের টহল। ডান দিকে, দেহ নিয়েই জিটি রোডে গ্রামবাসীদের অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র।

অশান্তির সূত্র তৈরি হয়েছিল বৃহস্পতিবার থেকে। শেষমেশ গোলমাল পাকল রবিবার রাতে। শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে চলে আসা কোন্দলে প্রাণ হারালেন তিন জন।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দলের খণ্ডঘোষের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে মনির ডেরা থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন রাতে পুলিশ ওঁয়ারি গ্রাম থেকে মোয়াজ্জেমকে ধরে। কিন্তু সেই রাতেই দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। শনিবার দুপুরে বর্ধমানের বীরহাটায় তৃণমূলের জেলা অফিসে মোয়াজ্জেম ও দলের খণ্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অলোক মাজির দ্বন্দ্ব মেটাতে বৈঠক করেন স্বপনবাবু। ছিলেন অলোকবাবুর ঘনিষ্ঠ মহম্মদ জামালউদ্দিন। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কিছুক্ষণ পরেই হইচই শুরু হয়ে যায়। বৈঠক কার্যত ভেস্তে যায়।

অলোকবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, এর পরেই গোলমাল পাকানোর ছক কষে মোয়াজ্জেমের লোকজন। রবিবার রাতে মোবাইলে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় অলোকবাবুর অনুগামী জামালউদ্দিন, শেখ সওকত (৪২) ও শেখ আইনাল লায়েককে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, মোয়াজ্জেম ২০১২ সালের মে পর্যন্ত দলের খণ্ডঘোষ ব্লকের সভাপতি ছিলেন। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, তোলাবাজির অভিযোগ তুলে দলের একাংশ তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ পাঠান। তার পরেই মোয়াজ্জেমকে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয় অলোকবাবুকে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় ব্লক সভাপতি টিকিট বণ্টনের দায়িত্ব পাওয়ার পরেও ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’পক্ষের মধ্যে প্রায়ই বচসা থেকে বোমাবাজির ঘটনা ঘটত। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতি গায়ের জোরে দখল নেওয়া এবং খণ্ডঘোষ, শাঁকারি ১ ও ২, শশঙ্গা, লোধনা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দিন তৃণমূলেরই নির্বাচিত সদস্যদের ঢুকতে না দিয়ে একতরফা ভাবে নিজের মতো করে বোর্ড গড়ার অভিযোগ রয়েছে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে সরকারি টাকা নয়ছয়-সহ নানা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা দলেরই সদস্যদের না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর দিকে। সে নিয়ে কিছু দিন আগে খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির ৯ জন সদস্য প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ করেন।

এর মধ্যেই ব্লক সভাপতির অনুগামী হিসেবে এলাকায় প্রভাব বাড়ছিল জামালউদ্দিনের। এ দিন ওঁয়ারি গ্রামে মোয়াজ্জেমের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অভিযোগ করেন, “ক্ষমতায় আসার আগে মোয়াজ্জেম জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার পরেই ভোল বদলে নানা দুর্নীতি, সালিশি সভা বসিয়ে তোলাবাজি-সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। প্রতিবাদ করলে মারধর করে এলাকাছাড়া করছিল। জামালউদ্দিন তখন থেকেই এ সবের প্রতিবাদ করতে শুরু করে।’’

মোয়াজ্জেমের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর গোষ্ঠীর লোকেদের পাল্টা দাবি, প্রায় ৬ মাস ধরে তাঁদের একটি কার্যালয় বন্ধ ছিল। খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতে মাসখানেক ঢুকতে পারছিলেন না তাঁরা। দু’তিন দিন আগে সেই কার্যালয় খোলা হয়। দলবল নিয়ে জামালউদ্দিন সেখানে গিয়ে বোমাবাজি করতে গেলে পাল্টা আক্রমণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

তিন জন খুন হওয়ার পরে এ দিন বীরহাটায় তৃণমূলের অফিসে দেহ নিয়ে গেলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, জেলা সভাপতি স্বপনবাবুর হস্তক্ষেপে মোয়াজ্জেম ছাড়া না পেলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। স্বপনবাবু অবশ্য জানান, কেন এমন ঘটল, সে নিয়ে দলের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক ও জেলা যুব সভাপতি খোকন দাসকে রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন