নয়া প্রযুক্তির ‘রেসিং কার’ আইআইটি-র পড়ুয়াদের

মাত্র এক লিটার পেট্রোলে পাড়ি দেওয়া যাবে ১৭ কিলোমিটার। আর শূন্য থেকে একশো কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ তুলতে সময় লাগবে ৫.৫ সেকেন্ড। আধুনিক প্রযুক্তির এমনই এক ‘রেসিং কার’ তৈরি করেছেন খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারা।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

পড়ুয়াদের তৈরি করা সেই রেসিং কার। নিজস্ব চিত্র।

মাত্র এক লিটার পেট্রোলে পাড়ি দেওয়া যাবে ১৭ কিলোমিটার। আর শূন্য থেকে একশো কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ তুলতে সময় লাগবে ৫.৫ সেকেন্ড।

Advertisement

আধুনিক প্রযুক্তির এমনই এক ‘রেসিং কার’ তৈরি করেছেন খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারা। রবিবার ক্যাম্পাসের কালীদাস অডিটোরিয়ামে ‘কে-থ্রি’ নামের এই গাড়িটি দেখানো হয়। সেই সঙ্গে জানানো হয়, আগামী ৮ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ায় ‘ফর্মুলা স্টুডেন্টস-২০১৬’ শীর্ষক ‘কার রেসিং’ প্রতিযোগিতায় এই গাড়ি নিয়ে যাবেন আইআইটির ১৬ জন পড়ুয়া। গাড়িটি বানিয়েছে আইআইটি-র পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি বিশেষ দল ‘টিম কার্ট’। ‘টিম লিডার’ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র কেতন মুন্ধ্রা বলেন, “আমরা এই গাড়িটি কম ওজনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছি। আগে এখানে যে সব গাড়ি বানানো হয়েছে তা প্রতি লিটার পেট্রোলে দু’কিলোমিটার পথ যেত। কিন্তু এই গাড়ি প্রতি লিটারে ১৭ কিলোমিটার যাবে। গাড়িটি তৈরি করতে শুধু পড়ুয়ারা নন, অধ্যাপক ও স্পনসরদের ভূমিকাও যথেষ্ট।”

‘ফর্মুলা স্টুডেন্টস’ প্রতিযোগিতা মূলত গাড়ি তৈরির কারিগরির ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাভাবনা তুলে ধরার মঞ্চ। গত ৮ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়ারা। তবে এত দিন বেশ ভারী গাড়ি বানাচ্ছিলেন তাঁরা। এ বার তাই কম ওজনে বেশি গতির গাড়ি তৈরিই ছিল ‘টিম কার্ট’-এর ৪০ জন পড়ুয়ার লক্ষ্য। সেই মতো এক আসনের গাড়িটির ‘বডি প্যানেল’ তৈরিতে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ‘কে থ্রি’-র ওজন হয়েছে ২২০ কিলোগ্রাম, যা আগের তুলনায় ৬০ কেজি কম। গাড়িটি কম সময়ে দ্রুত চালানোর জন্য গিয়ার সিস্টেমেও কিছু বদল আনা হয়েছে। বোতাম টিপেই বদলানো যাবে গিয়ার।

Advertisement

কিন্তু কম ওজনের গাড়ি বেশি গতিতে চললে তো দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়?

জবাবে ‘টিম কার্ট’-এর সদস্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হিমল অগ্রবাল বললেন, ‘‘যেখানে প্রতিযোগিতা হবে সেখানে অনেক বাঁক। ফলে, গাড়ির গতি কোনও ভাবেই ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি তোলা যাবে না। আর ওই গতিতে এই গাড়ির কোনও সমস্যা হবে না।’’ এত দিন এই প্রতিযোগিতায় খড়্গপুর আইআইটি থেকে যে সব গাড়ি পাঠানো হয়েছে, তাতে ‘ফোর স্ট্রোক’ ইঞ্জিনটি চারটি সিলিন্ডারের হত। তবে ‘কে-থ্রি’ গাড়িটিতে ‘ফোর স্ট্রোক’ ইঞ্জিনই করা হয়েছে মাত্র একটি সিলিন্ডারে। এর ফলে, জ্বালানি খরচ কম হবে। আর তাতেই গাড়ি প্রতি লিটার পেট্রোলে গড়াবে প্রায় ১৭ কিলোমিটার।

প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই গাড়িটি তৈরি করতে দেশের বেশ কয়েকটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে আইআইটি সূত্রে খবর। যাঁরা গাড়ি বানিয়েছেন সেই পড়ুয়ারাও চান, আগামী দিনে সাধারণ গাড়ি তৈরিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক। তবে আপাতত তাঁদের লক্ষ্য রাশিয়ার প্রতিযোগিতায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ৩০টি দলের মধ্যে সফল হওয়া। খড়্গপুর আইআইটি-র মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া কেভিন ব্যাঙ্কার বলেন, “এই রেসিং কার তৈরি করতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আশা করছি আমরাই জিতব।’’ মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক শঙ্করকুমার সোমেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের ছেলেরা তো প্রতি বছরই এই ধরনের গাড়ি বানায়। দিনে দিনে প্রযুক্তির মান আরও বাড়ছে। আশা রাখছি ভবিষ্যতে ওদের প্রযুক্তি দেশের গাড়ি শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন