বাবা বুঝলেন, আমিও পারি

বিখ্যাত কীর্তনিয়া রাধারানী দেবীর প্রধান শ্রীখোলবাদক ছিলেন আমার বাবা জলধর রায়। কিন্তু দল ছেড়ে অর্থকষ্টে পড়লেন। আমি তখন ক্লাস টুয়ে পড়ি।

Advertisement

গৌরী রায় পণ্ডিত

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:১৭
Share:

কীর্তনিয়া গৌরী

শুনেছি, ধাইয়ের মুখে আমার জন্মের খবর পেয়ে বাবা রাগে হাতের ছাতা আছড়ে ভেঙে ফেলেছিলেন। প্রথম সন্তান হিসেবে বাবা চেয়েছিলেন ছেলে। ঠাকুমা মুখ দেখতে বলায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন “মেয়ে আবার দেখার কী আছে?” আমার ঠাকুরদা, বেড়াচাঁপা গাঁয়ের সম্পন্ন কৃষক দশরথ রায় রুখে উঠেছিলেন। লাঠি উঁচিয়ে বলেছিলেন, “খবরদার! মেয়ে মানে লক্ষ্মী এসেছে ঘরে।”

Advertisement

বিখ্যাত কীর্তনিয়া রাধারানী দেবীর প্রধান শ্রীখোলবাদক ছিলেন আমার বাবা জলধর রায়। কিন্তু দল ছেড়ে অর্থকষ্টে পড়লেন। আমি তখন ক্লাস টুয়ে পড়ি। ছোট থেকে শুনে-শুনে আমি কীর্তনের আদব-কায়দা রপ্ত করেছিলাম। সেটা মা আরতি রায়ের নজর এড়ায়নি। তিনি আমায় শেখাতে শুরু করলেন। ফুলদোলের সময়ে নবদ্বীপের এক গোস্বামীবাড়ির আসরে আমার গাওয়া ‘নৌকাবিলাস’ পালার খুব প্রশংসা হল। সেই প্রথম বাবার বিশ্বাস হল, মেয়েকে দিয়েও কিছু হয়। শুরু হল তালিম, তার পর আসর। আমি মূল গায়ক, শ্রীখোলে বাবা, করতাল আর দোহারে মা আর ভাই। শুধু এক হারমোনিয়ম বাদককে সঙ্গে নেওয়া হল। প্রথম যাই নলহাটির এক গ্রামে। গানের শেষে গাঁয়ের লোকে কিছু পয়সা দিলেন। সেই টাকায় চাল কিনে তবে রান্না। এই ভাবে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন। প্রথম বার মালদহে গাইতে যাচ্ছি। ট্রেন থেকে নেমে দেখি টাঙ্গায় যেতে হবে। তিন রাত্তির গান হবে মাত্র তিনশো টাকার বিনিময়ে। টাকা কই? পাঁচমাইল রাস্তা শ্রীখোল, হারমোনিয়ম ঘাড়ে করে আলপথ পাড়ি দিয়েছিলাম আমরা। ইতিমধ্যে গোপাল দাস বাবাজির কাছে কীর্তন শেখা শুরু করেছি। প্রথম আসরে দেড়শো টাকা পেয়েছিলাম। ২০০০ সাল থেকে দিল্লি, অসম, ত্রিপুরা আর বছরে পাঁচ-ছ’বার করে বাংলাদেশ যেতে শুরু করি। প্লেনের টিকিট আসে। একপালা কীর্তন গাইতে যখন বিশ পঁচিশ হাজার টাকা দক্ষিণা পাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন