শেষমেশ মামলার ঠাঁইবদল। সারদা-কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী মদন মিত্রের জামিন-মামলাটি আলিপুর জেলা জজের আদালত থেকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সরিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের নির্দেশ, আগামী তিন দিনের মধ্যে মামলাটি নগর দায়রার মুখ্য বিচারকের আদালতে স্থানান্তরিত করতে হবে।
এবং এই রায়ের জেরে মদন মিত্রের জামিন-মামলা আবার পিছিয়ে গেল। আপাতত কথা রয়েছে, আলিপুর জেলা কোর্ট থেকে মামলার কাগজপত্র সোমবার এসে পৌঁছবে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচার ভবনে অবস্থিত নগর দায়রা আদালতে। তার পরে সেখানে স্থির হবে শুনানির পরবর্তী তারিখ।
আলিপুর জেলা আদালতের ‘নিরপেক্ষতা’ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে মদনের জামিন-মামলা অন্য কোনও আদালতে সরাতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের এজলাসে দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব চলে। বৃহস্পতিবারের শুনানি শেষে বিচারপতি বাগ জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুক্রবার বেলা বারোটায় তিনি রায় দেবেন।
রায় শুনতে এ দিন হাইকোর্টের দোতলায় বিচারপতি বাগের এজলাস আগে থেকেই ভিড়ে ভিড়াক্কার হয়ে যায়। বাদী ও বিবাদী পক্ষের প্রধান কৌঁসুলিরা অবশ্য আসেননি। দেখা যায়নি মদনবাবুর দুই ছেলেকেও, যাঁরা বৃহস্পতিবার সওয়াল-জবাব চলাকালীন ঠায় বসে ছিলেন।
বেলা বারোটায় বিচারপতি বাগ তাঁর সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনানোর পরে এজলাসে উপস্থিত শাসকদলের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের অনেকেই মুষড়ে পড়েন। ‘‘ব্যাঙ্কশালে কবে শুনানি হবে, তার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’’— আক্ষেপ করেন এক জন। ওঁদের কারও কারও আশঙ্কা, আলিপুরের জেলা জজের ভূমিকা নিয়ে সিবিআইয়ের তোলা প্রশ্নকে হাইকোর্ট কার্যত মান্যতা দেওয়ায়
অন্য বিচারকদের উপরে তার প্রভাব পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে মদনবাবুর জামিনপ্রাপ্তির পথ আরও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হয়ে গেল বলে মনে করছেন মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ কিছু আইনজীবী। সিবিআই ঠিক কী কারণে আলিপুর জেলা জজের এজলাস থেকে মামলা সরাতে চাইল?
কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো গত ৮ মে হাইকোর্টে মামলা দাখিল করে জানিয়েছিল, আলিপুর জেলা আদালতের প্রতি তাদের আস্থা নেই। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ওই আদালতে যে মদন মিত্রের জামিনের আবেদন পেশ হয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের তা জানানোই হয়নি! উপরন্তু সিবিআই-কে না জানিয়ে আলিপুর এসএসকেএমের কাছে মদনবাবুর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করেছে। পাশাপাশি তারা যে ভাবে মদনবাবুর জামিন মামলার পূর্বনির্ধারিত শুনানি এগিয়ে এনেছিল (১৩ থেকে ১১ মে), তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের মনঃপূত হয়নি।
এ হেন প্রেক্ষাপটে সিবিআইয়ের পর্যবেক্ষণ, মদন মিত্রের জামিন-মামলা সম্পর্কে আলিপুর জেলা আদালত আগাম কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে। ওই আদালতের বিচার সংক্রান্ত ‘শৃঙ্খলাপরায়ণতা’র দিকেও আঙুল ওঠে। সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবব্রত ওরফে নিতু সরকারের জামিন নাকচ করতে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে জেনেও আলিপুর জেলা জজ তাঁর জামিন-শর্ত শিথিল করেছেন বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের।
হাইকোর্ট কার্যত যুক্তিগুলোকে মান্যতা দিয়েছে। এ দিন বিচারপতি বাগ তাঁর রায়ে জানান, আলিপুর জেলা আদালতের প্রতি অনাস্থার পিছনে সিবিআইয়ের দেওয়া যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিচারপতির বক্তব্য, এমতাবস্থায় মামলাটি স্থানান্তরের ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।
‘‘এবং সেই ক্ষমতাবলে ন্যায়-বিচারের স্বার্থেই মামলাটি নগর দায়রা আদালতে সরিয়ে দেওয়া হল।’’— বলেছেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মন্ত্রী জেলে, মুখ্যমন্ত্রী মিছিলে! রাজ্য সরকার সর্বতো ভাবে মন্ত্রীর বিচার প্রক্রিয়ায় অসহযোগিতা করেছে। সিবিআইয়ের উচিত ছিল আরও আগে আবেদন করা।’’