Fire

‘লিফট খোলা মাত্রই ঝলসে দেয় আগুন’, বহুতলের অগ্নিকাণ্ডে ত্রিমুখী তদন্ত

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বহুতলের চোদ্দোতলার সার্ভার রুম থেকেই প্রথমে আগুন লেগেছিল। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার, নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১ ০৬:৩১
Share:

কয়লাঘাট ভবনে জ্বলছে আগুন। —নিজস্ব চিত্র

কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের অগ্নিকাণ্ডে রেলের ওই বহুতলের ভারপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে গাফিলতির জেরে মৃত্যু ঘটানোর (৩০৪এ ধারা) অভিযোগে মামলা রুজু করল লালবাজার। এর সঙ্গে দমকলের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তের জন্য গড়া হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ তদন্ত দলও। তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানিয়েছে রেলও। সোমবার রাতের অগ্নিকাণ্ডে ন’জন মারা গিয়েছেন। মঙ্গলবার সব মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। ফরেন্সিক দল দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বহুতলের চোদ্দোতলার সার্ভার রুম থেকেই প্রথমে আগুন লেগেছিল। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। এ দিন শোকজ্ঞাপন করে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দুপুরে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কয়লাঘাটে যান, বিকেলে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ এ দিন জানায়, পার্থসারথি মণ্ডল ও শ্রবণ পাণ্ডে বিষাক্ত পোড়া ধোঁয়ায় (কার্বন মনোক্সাইড) দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁদের দেহ পাওয়া যায় একটি বন্ধ লিফটে। চোদ্দোতলার লিফটের সামনে ছড়িয়ে ছিল বাকি সাত জনের দেহ। তাঁদের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় বলে ময়না-তদন্তে জানানো হয়েছে। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই সাত জনের মধ্যে সুদীপ দাসের দেহ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল। ফরেন্সিক-কর্তারা জানান, লিফটের দরজা ১৪তলায় খোলা মাত্র লিফটের ভিতরে থাকা অক্সিজেন বেরিয়ে যায়। সেই অক্সিজেন আগুনের গোলা তৈরি করে সকলকে ঝলসে দিয়েছে।

Advertisement

পুলিশি সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা ঘটনাস্থলে তারের টুকরো, ছেঁড়া পোশাক ও ছেলেদের মানিব্যাগ পেয়েছে। দু’টি পোড়া কম্পিউটার সার্ভার উদ্ধার করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ফরেন্সিক দলের তরফে পলাশবরণ মাইতি বলেন, ‘‘কোনও কিছুই অক্ষত নেই। নমুনা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট এলে তা পুলিশকে দেওয়া হবে।’’ প্রাথমিক ভাবে ফরেন্সিকের অনুমান, সার্ভার রুমের বিদ্যুতের তারে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল। কিন্তু পুরো বিদ্যুতের তার যে-ভাবে গলে গিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, আগুন ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ‘সিট অব ফায়ার’ বা আগুনের উৎস তৈরি হয়েছিল। আজ, বুধবার ফের ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে যাবে।

এই সব তদন্তের মধ্যেই বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় এ দিন টুইট করে বলেছেন, ‘সুদক্ষ নীতি এবং বহুতলের অগ্নিনির্বাপণ শংসাপত্র দরকার।’ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ওই রেল অফিসের শংসাপত্র ছিল কি না, সেটা জানাই এখন তদন্তকারীদের মূল লক্ষ্য। একটি সূত্রে অভিযোগ করে হয়েছে, ওই বাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে দমকলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। বিশেষ তদন্ত দলে লালবাজারের বম্ব স্কোয়াডের অফিসারেরাই মূলত আছেন, নেতৃত্বে রয়েছেন এক জন সহকারী কমিশনার। কাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা উপরে উঠেছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছে সিট। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘আমাদের তরফেও বিভাগীয় ডিজির নেতৃত্বে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

রেলের তরফে গাফিলতি ছিল কি না, সেই প্রশ্ন গোড়া থেকেই উঠছে। তবে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এ দিন পাল্টা ‘রাজনৈতিক কটাক্ষে’ বিঁধেছেন মমতাকে। মালবীয় বলেন, ‘‘কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যকে দোষারোপ করেন। ২০১১ সালে আমরি এবং ২০১৬-য় বিবেকানন্দ উড়ালপুলের বিপর্যয়ের সময় সিপিএম-কে দুষেছিলেন। এখন তিনি রেলকে দুষছেন। ২০১০ সালে পার্ক স্ট্রিট অগ্নিকাণ্ডে তিনি পরিকাঠামোর খামতির কথা বললেও গত ১০ বছরে তার উন্নতি হয়নি।’’ আর রাজ্যপালের কটাক্ষ, দমকলের কাছে ঠিক উপকরণ থাকলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি টুইটে দায়ী করেছেন দমকলের ‘পরিকাঠামোহীনতাকে’। লিখেছেন, ‘দমকলকর্মীদের সাহসের অভাব ছিল না। অভাব ছিল পরিকাঠামোর। দমকল ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন।’

অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে পূর্ব রেলের প্রিন্সিপাল সেফটি অফিসার জয়দীপ গুপ্তের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে। রেল সূত্রের খবর, কেন এই বিপত্তি, তা-ও খতিয়ে দেখবে কমিটি। ফরেন্সিক রিপোর্টের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মী-অফিসারদের বয়ানও নেওয়া হবে। অগ্নিনির্বাপণ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটা কাজ করেছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
দু’সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশ-সহ রিপোর্ট দেবে কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন