ঝলসে গেলেন ১০ দমকলকর্মী

দোকানের শাটার তুলতেই তীব্র শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। ভিতরে পরপর বিস্ফোরণ। আগুনের হল্কায় ঝলসে গেলেন সামনের সারিতে থাকা দশ জন দমকলকর্মী। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো গুদাম-মালিক এবং কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাও প্রবল তাপে চিৎকার করে উঠলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০১:২৯
Share:

বিধ্বংসী: বড়বাজারের পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটে সেই দোকানের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দমকলের অগ্নি-যুদ্ধ।

দোকানের শাটার তুলতেই তীব্র শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। ভিতরে পরপর বিস্ফোরণ। আগুনের হল্কায় ঝলসে গেলেন সামনের সারিতে থাকা দশ জন দমকলকর্মী। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো গুদাম-মালিক এবং কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাও প্রবল তাপে চিৎকার করে উঠলেন। এক দিকে আগুন নেভানোর লড়াই। অন্য দিকে আহত দমকলকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হুড়োহুড়ি।

Advertisement

সরু গলির দু’পাশে সার দিয়ে রাসায়নিকের গুদাম ও দোকান। বুধবার সকাল সাড়ে ন’টা। দোকান খোলা শুরু হয়নি তখনও। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ। পরপর আট-দশ বার। তত ক্ষণে ১২ নম্বর পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটে দোকানের বন্ধ শাটারের ফাঁক দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করেছে। একটি পাঁচতলা বাড়ির একতলায় সেই দোকান।

দশ মিনিটেই পৌঁছয় দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন। বন্ধ শাটার তুলতেই ফের বিস্ফোরণ। আগুনের হল্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দমকলের দশ জন কর্মী। সরু গলিতে ইঞ্জিন না ঢোকায় হিমশিম খেতে হয় বাকিদের।

Advertisement

আরও পড়ুন: বৃষ্টির স্বস্তি মরীচিকা, চলবে ভ্যাপসা গরম

কিন্তু প্রশ্ন হল, ভিতরে কী আছে না জেনেই কোনও সুরক্ষা-পোশাক ছাড়া দমকলকর্মীরা শাটার খুললেন কেন? দফতরের খবর, কর্মীদের অনভিজ্ঞতার জন্যই বাহিনীর এত জন কর্মীকে জখম হতে হল। কলকাতায় সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু এত জন দমকলকর্মী আগুনে ঝলসে গিয়েছেন বলে শোনা যায়নি।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলছে জখম দমকলকর্মীদের। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

এক প্রাক্তন দমকলকর্তা জানালেন, খুব অল্প দিনের প্রশিক্ষণেই কাজে নেমে পড়তে হচ্ছে তরুণ কর্মীদের। আগে অন্তত ছ’মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। এখন তা কমে হয়েছে তিন মাস। এ ছা়ড়া, কর্মীদের যে পরিমাণ পড়াশোনা করানো হত, যত রকমের
পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শেখানো হতো, এখন তা হয় না। প্রাক্তন ওই কর্তার মতে, যখন কোনও
বদ্ধ জায়গায় আগুন লাগে, তখন ও ভাবে গোটা শাটার খোলারই কথা নয়। অনভিজ্ঞতার কারণেই এটা ঘটেছে। তাঁর ব্যাখ্যা, কোনও বদ্ধ জায়গায় আগুন লাগলে সেখানে অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। ওই অবস্থাকে
আগুনের পরিভাষায় ‘ব্যাক ড্রট’ বলা হয়। এই সময়ে হঠাৎ সম্পূর্ণ শাটার তুলে দিলে যে অনেকটা পরিমাণ অক্সিজেন একসঙ্গে ঢোকে ভিতরে, তার জেরে বিস্ফোরণ-সহ দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। তাঁর মতে, দমকলকর্মীদের উচিত ছিল, শাটার দুই ইঞ্চি ফাঁক করে ভিতরে তোড়ে জল দেওয়া এবং তার পরে ধীরে ধীরে শাটার তোলা। প্রশ্ন
উঠছে দমকলকর্মীদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়েও। সিআইডি বা বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা যে বিশেষ পোশাক বা মুখোশ পরে কাজে নামেন, এ দিন দমকলকর্মীদের ক্ষেত্রে তা
দেখা যায়নি।

দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, কিছু বোঝার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে। ‘‘পোশাক বা নিরাপত্তায় খামতি ছিল বলে মনে হয় না। এমন যে ঘটতে পারে, আন্দাজই ছিল না কারও। অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটেছে,’’ বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, এত ঘিঞ্জি জায়গায় যে ভাবে দাহ্য বস্তু থাকছে, তা বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘‘ডিজি-কে বলেছি বেআইনি ভাবে যেখানে যত দাহ্য পদার্থ আছে, তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে।’’

দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফায়ার স্টেশন অফিসার তাপসকুমার কুশারী দমকলকর্মীদের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনিই সব চেয়ে বেশি জখম হয়েছেন। এ ছাড়া অনির্বাণ দে, নারায়ণ
দাস, কপিলদেব চট্টোপাধ্যায় নামে আরও তিন কর্মী গুরুতর জখম। অনির্বাণের স্ত্রী সঞ্চিতা বলেন, ‘‘ওঁদের কাজে ঝুঁকি আছেই। কিন্তু এমন ঘটনা কমই ঘটে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন