Kolkata

শুনানির তারিখ পেতেই ১১ বছর! অপেক্ষায় বৃদ্ধা

সুরাহা তো দূর অস্ত্‌! সামান্য মামলার শুনানি হতেই লেগে গিয়েছে প্রায় এক যুগ! অপেক্ষা করতে করতে চুলে পাক ধরেছে নুরজহান বিবির।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ০৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র

সুরাহা তো দূর অস্ত্‌! সামান্য মামলার শুনানি হতেই লেগে গিয়েছে প্রায় এক যুগ! অপেক্ষা করতে করতে চুলে পাক ধরেছে নুরজহান বিবির। তবু অপেক্ষা শেষ হয়নি। ঘরের মানুষটা কোথায় গেল, তা আজও জানেন না তিনি। স্বামীকে খুঁজতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক যুগ আগে। কিন্তু সেই মামলার গতি পেতেই কেটে গিয়েছে ১১ বছর।

Advertisement

২০০৯ সালের এক রাতে এসেছিল ওরা। ‘ওরা’ কারা, তা ঠিক জানেন না বৃদ্ধা। তবে ‘ওরা’ নিজেদের বলেছিল বাংলাদেশের পুলিশ। নুরজহানের স্বামী হাসেম আলিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারা। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে, জানতে চেয়ে নুরজহানের কপালে জুটেছিল মার। প্রহারের চোটে ভেঙেছিল দাঁতও। ওই ঘটনার পরে পুলিশ-বিএসএফের কাছে অবশ্য কোনও সাহায্য পাননি কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা নুরজহান।

বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দিঘলটারি গ্রাম। সেখানে সর্বক্ষণই চলছে বিএসএফের নজরদারি। অথচ এমন এক গ্রাম থেকেই রাতের বেলা ‘বিদেশের পুলিশ’ এসে নিয়ে গিয়েছিল লোকটাকে। মারতে-মারতে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা এড়াতে গুলিও চালিয়েছিল তারা। সে রাতে অচেনা লোকগুলির সঙ্গে স্বামীকে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে দেখেছিলেন নুরজহান। পরের দিনই দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। প্রশাসনের কাছে সাহায্য না-পেয়ে ২০০৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নুরজহান। কিন্তু সেই মামলার ঠিক মতো শুনানি শুরু হয়েছে ২০২১ সালে!

Advertisement

হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজতে নতুন করে লড়াইয়ে নেমেছেন নুরজহানের ছোট ছেলে নাজ়ির হোসেন। রোজগারের আশায় দুই ভাই শ্রমিকের কাজ নিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। দাদা এখনও দিল্লিতে। কিন্তু ভাই কাজ ছেড়ে ফিরেছেন বাড়িতে। তিনিই নতুন করে আইনজীবী ঠিক করে মামলা লড়ছেন। বলছেন, ‘‘জানি না বাবার খোঁজ পাব কি না। কিন্তু শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’

আদালতের খবর, ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল এক বার মামলার শুনানি হয়েছিল। সে বার আদালত কিছু নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরে আর ওই মামলার শুনানি হয়নি। মামলাটির ফের শুনানি হয় ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর। কিন্তু বিএসএফ-সব বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলিরা এক মাস সময় চান। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মামলাটির ফের শুনানি হয়। কিন্তু তখনও মামলার তেমন নড়চড় হয়নি। ১৮ জানুয়ারি শুনানিতেও বিএসএফের কৌঁসুলি তেমন কিছু জানাতে না-পারায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে। আদালত এ-ও জানায়, ২০০৯ সালের নির্দেশের পরে কিছুই হয়নি। আদালতের তিরস্কার শুনে বিএসএফ একটি হলফনামা জমা দিয়েছে। কিন্তু তার পরে?

নুরজহানের আইনজীবী ফিরোজ হাসান জানান, ৫ মার্চ শুনানিতে আদালত বলে, হাসেম যে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন তার প্রমাণ দিয়ে হলফনামা দাখিল করতে হবে। আগামী ৩০ মার্চ মামলার ফের শুনানি হতে পারে।

এতটা পথ পেরিয়ে শেষমেশ ঘরের মানুষের খোঁজ মিলবে কি না, তা জানেন না নুরজহান। অথচ গত ১১ বছর ধরে সেই মানুষটার পথ চেয়েই দিন গুনছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement