হাওড়া বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া পানশালায় ভাঙচুরের ঘটনায় দুই সিআরপি জওয়ানকে আটক করেছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। যদিও ঘটনার দিন অর্থাৎ ব়ৃহস্পতিবার গভীর রাতেই ওই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, শুধু পানশালা কর্তৃপক্ষই নন। জওয়ানেরাও ওই পানশালার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরুর পরেই আটকদের ছাড়া হয়েছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকেই জওয়ানদের আটক করেছিল স্থানীয় থানা। কিন্তু পানশালার তরফে প্রথমে কোনও অভিযোগ না আসায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে গভীর রাতে দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেন।’’ কমিশনার আরও জানান, ‘‘কোনও পক্ষই গুরুতর আঘাতের অভিযোগ করেনি। শুধুমাত্র বচসা ও হাতাহাতির অভিযোগ এনেছে। তাই দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। উভয় তরফকেই নোটিস পাঠানো হবে।’’
কী ঘটেছিল ঘটনাটি?
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন আসামের দারাং থেকে ওড়িশার কোরাপুটে যাচ্ছিল সিআরপি জওয়ানদের একটি দল। হাওড়া স্টেশন থেকে সওয়া ন’টায় ট্রেন ধরার জন্য প্ল্যাটফর্মেই অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই পানশালায় যান তিন জওয়ান। অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরে সোফায় পা তুলে বসে তাঁরা অন্যদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি করলে পানশালার ম্যানেজার বারণ করেন। ওই জওয়ানেরা তাতে কান দেননি বলেই অভিযোগ। পানশালায় উপস্থিত অন্যরা বারবার ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানাতে থাকেন। এর পরেই ওই তিন জনকে বাইরে বার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ, তিন জওয়ানকে বার করার সময়ে পানশালার কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই দুই জওয়ানকে আটক করে। ততক্ষণ তৃতীয় জনের কাছে খবর পেয়ে বাকি জওয়ানেরা হাজির হন পানশালায়। অভিযোগ, তাঁদের দুই সঙ্গীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গিয়েছে খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ জওয়ানেরা পানশালার আসবাব ও অন্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। আরও অভিযোগ, এতে বাধা দিতে গেলে বেধড়ক মারধরে মাথা ফেটে যায় পানশালার রক্ষী সুমন লাহার। এই গণ্ডগোলের জেরে বন্ধ হয়ে যায় আশপাশের দোকানপাটও। খবর পেয়ে ফের পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর পরে পানশালা থেকে জওয়ানদের দলটি গোলাবাড়ি থানায় যায়। তবে পানশালার তরফে তখনও কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় আটক দুই জওয়ানের বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি পুলিশ। পরে ওই দু’জন সহ তিন-চার জন জওয়ান থেকে গেলেও বাকিরা নির্দিষ্ট ট্রেন ধরে ওড়িশা রওনা হন। পুলিশ জানায়, গভীর রাতে সুজিত কুমার নামের এক জওয়ান পানশালার কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁকে বেধড়ক মারধরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাওড়া জেলা হাসপাতালে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসাও হয়। অভিযোগে ওই জওয়ান পুলিশকে জানিয়েছেন, অকারণেই তাঁদের পানশালার বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছিল। তারই প্রতিবাদ করায় পানশালার কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন। তাঁর হাতে গুরুতর চোট লাগে। দুই সঙ্গীকে মার খেতে দেখেই তৃতীয় জন বাকিদের খবর দিতে যায়।
আর ওই জওয়ানেরা এসেই পানশালায় কার্যত তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। গোটা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই রাতে ১১টা নাগাদ পানশালার তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। পানশালার মালকিন ইসুদাস ভাবনামি বলেন, ‘‘জওয়ানদের অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন আমাদের কর্মীরা। তাতেই এই তাণ্ডব চালান জওয়ানেরা। ওঁদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তাই আতঙ্কে রয়েছি। ফিরে এসে ফের হামলা না চালায়!’’