দালাল-যোগে ফের গ্রেফতার ২

আয়ার পরে এ বার অস্থায়ী কর্মী। এসএসকেএম হাসপাতালের দালালচক্রের সঙ্গে সেখানকার আরও এক কর্মীর যোগ পেল পুলিশ। এক রোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share:

এসএসকেএম হাসপাতাল।—ফাইল চিত্র।

আয়ার পরে এ বার অস্থায়ী কর্মী। এসএসকেএম হাসপাতালের দালালচক্রের সঙ্গে সেখানকার আরও এক কর্মীর যোগ পেল পুলিশ। এক রোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই অস্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি এ দিন গ্রেফতার করা হয়েছে হাসপাতালের কর্মী আবাসনে থাকা এক যুবককেও। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই হাসপাতালের এক আয়াকে। রবিবার ধরা পড়েছে এক রক্তের দালাল। পুলিশ বলছে, তার থেকে খবর পেয়েই এ দিন ওই অস্থায়ী কর্মীকে ধরা হল। তাতেই চিন্তা আরও বেড়েছে পুলিশের। কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের জেরেই যে দালালদের তাণ্ডব বেড়ে চলেছে এসএসকেএমে, এ দিনের ঘটনা ফের তা প্রমাণ করে দিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সোমবার গ্রেফতার হওয়া অস্থায়ী কর্মীর নাম বান্টি দত্ত। সে প্রসূতি বিভাগের কাজ করে। এ দিন দুপুরে হাসপাতাল চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে রাহুল লাল নাম অপর এক দালালকে। সে ওই হাসপাতালের কর্মী আবাসনের বাসিন্দা। তার এক আত্মীয় ওই হাসপাতালের কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ, মঙ্গলবার ওই দু’জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বালিগঞ্জের বাসিন্দা এক রোগীর আত্মীয়ের কাছে খবর পেয়ে রবিবার মহম্মদ শেখ নাসিম নামে এক রক্তের দালালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাড়ি হাওড়ার পাঁচলায়। এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিও-ভাস্কুলার থোরাসিক সার্জারি বিভাগের বাইরে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিত সে। পুলিশের দাবি, তাকে জেরা করেই বান্টি দত্তের নাম জানা যায়। কোলাঘাটের বাসিন্দা বান্টি বেশ কয়েক বছর ধরে প্রসূতি বিভাগে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছিল। সেই সুবাদে ওই বিভাগের অন্দরমহলে অবাধ যাতায়াত ছিল তার। চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গেও বান্টির দহরমমহরম ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই বিভাগে রোগী দেখাতে হলে তাকে এড়িয়ে কেউ চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছতেই পারতেন না। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এ দিন পুলিশের পক্ষ থেকে রোগী সেজে ওই বিভাগের বাইরে ঘোরাঘুরির সময়ে বান্টি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসককে দেখিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁদের কাছেও টাকা চায় সে। তখনই ঘটনাস্থল থেকে পাকড়াও করা হয় বান্টিকে।

পুলিশ জানায়, সোমবার বান্টিকে গ্রেফতারের আগেই ওই হাসপাতাল চত্বর থেকে ধরা হয়েছে রাহুলকে। অভিযোগ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য আসা রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে ভাব জমাত সে। পরে তাঁদেরকে হাসপাতালের বদলে বাইরের কোনও ল্যাবে টেস্ট করানোর জন্য টাকা নিত। এ দিনও এক রোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সময়ে ধরা পড়ে যায় রাহুল।

পুলিশের দাবি, এসএসকেএম হাসপাতালে দালালদের নির্দেশ মেনেই রোগীর আত্মীয়দের চলতে হয় বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। পুজোর আগে ভবানীপুরের বাসিন্দা এক যুবকের মৃত্যুর পরে অভিযোগ ওঠে, দালালদের মধ্যস্থতায় ওই রোগী ভর্তি হলেও চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসা করেননি। এর পরেই রোগীর পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা বাধে চিকিৎসকদের একাংশের। সব শুনে দালালদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশ পেয়ে লাগাতার অভিযান চালিয়ে পুজোর আগেই গ্রেফতার করা হয় ন’জনকে। লাগাতার পুলিশি অভিযানের পরে বেশ কিছু দিন হাসপাতাল থেকে গা ঢাকা দিয়েছিল দালাল চক্রের সদস্যেরা। কিন্তু পুজোর পরেই ফের স্বমহিমায় ফিরে আসতে শুরু করেছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন