ফাইল চিত্র।
ছাদ মেরামতি হচ্ছিল। তার পাঁচ ফুট উপরেই হাই টেনশন তার। সেই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেন বাড়ির মালিক। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন এক মিস্ত্রিও। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলির বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্কে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ছাদ মেরামতির সময়ে ভেজা বাঁশ হাই টেনশন তারে লাগায় এই বিপত্তি।
পুলিশ জানায়, বাড়ির মালিক, বছর পঁয়ত্রিশের যুবক অনিল ঠাকুর ও মধ্যবয়স্ক মিস্ত্রি রামশঙ্কর দাস এম আর বাঙুর হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। কিন্তু হাই টেনশন তারের ঠিক নীচের জমিতে নির্মাণ কী ভাবে হলো, তার অনুমোদনই বা কে দিল, এ দিনের ঘটনায় সেই প্রশ্নও উঠেছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ-৫৫বি সোনালি পার্কের ওই বাড়ির বৈঠকখানার ছাদ দিয়ে ঘরের ভিতরে জল পড়ছিল। পুলিশ
জানায়, বাড়ির মালিক অনিলবাবু ওষুধের ডিলার। ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ায় সোমবার নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বাড়ির লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। তাই এ দিন সারাইয়ের কাজ চলছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, মিস্ত্রিদের সঙ্গে বাড়ির লোকজনও সারাইয়ের কাজে হাত লাগান। অনিল নিজেও সেই কাজ করছিলেন।
রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশকে দেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, প্লাস্টারের কাজ করার জন্য ভারা বাঁধার প্রয়োজন ছিল। সেই জন্য ছাদে দাঁড়িয়ে একটি বাঁশ উঁচু করে তুলে ধরছিলেন অনিল ও রামশঙ্কর। কিন্তু বাঁশটি ভেজা ছিল। উঁচু করে তোলার সময়ে হাই টেনশন তারকে ওই ভেজা বাঁশ স্পর্শ করা মাত্র দু’জনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁদের শরীরের অনেকটা পুড়ে যায়।
অনিলের বাবা বিশ্বনাথ ঠাকুরের কথায়, ‘‘হঠাৎ বোমা ফাটার মতো একটা আওয়াজ। তার পরের মুহূর্তেই দেখি, আমার ছেলে আর এক জন মিস্ত্রি ছাদে ছিটকে পড়েছেন। গায়ের চামড়া ঝলসে পুড়ে গিয়েছে।’’
দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় তথা ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তৃণমূলের গোপাল রায়। তাঁর বক্তব্য, হাই টেনশন তারের নীচে কোনও রকম নির্মাণ বেআইনি। তার পরেও ওখানে বাড়ি তৈরি হলো কী ভাবে, কাউন্সিলর তা নিয়ে ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের তিরস্কার করেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, চার কাঠা জমির উপরে অনিল ও তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি প্রায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে নির্মিত হয়েছে।
তবে সেটা চার-সাড়ে চার বছর আগে। গোপালবাবুর কথায়, ‘‘সেই সময়ে আমি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম না। এখানে বাড়ি নির্মাণ
হলো কী ভাবে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, পুরসভা হাই টেনশন তারের নীচে নির্মাণের অনুমতি দেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাই টেনশন তারের নীচে থাকা ওই জমি প্রথমে সস্তায় কেনেন ভোলানাথ রায় নামে এক জন, যিনি অনিলের শ্বশুরমশাই। তাঁর কাছ থেকে অনিল ওই জমি পেয়ে বাড়ি তৈরি করেন।
তখন ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন অনিতা করমজুমদার, এখন যিনি ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। বিকেলে তিনিও ঘটনাস্থলে যান। অনিতাদেবীর বক্তব্য, ওই তল্লাটে গরিব মানুষদের বসবাস, কম দামে পেয়ে তাঁরা জমি কিনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বারবার বলা হয়েছিল, হাই টেনশন তারের ঠিক নীচে নির্মাণ না করতে। তার পরেও অনেকে আমল দেন না। গরিব মানুষ বলে মানবিক কারণে বেশি জোর করা হয়নি।’’
বর্তমান কাউন্সিলর গোপালবাবুর কথায়, ‘‘হাই টেনশন তারের ঠিক নীচে না করে একটু সরিয়ে যদি বাড়ি করা হতো, তা হলেও হয়তো এই দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মিলত।’’
ওই তল্লাটে আরও গোটা দশেক বাড়ির কাছাকাছি হাই টেনশন তার গিয়েছে। এ দিনের এই ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।