Ragging In Kolkata Medical College

র‌্যাগিংয়ে অসুস্থ কলকাতা মেডিক্যালের দুই চিকিৎসক-পড়ুয়া

মঙ্গলবার র‌্যাগিংয়ের লিখিত অভিযোগ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে জমা দিয়েছেন দুই পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা। অভিযোগের তির একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৩৬
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পাঁচ মাস আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। হস্টেলে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণ ছিল মানবাধিকার কমিশনেরও। তবু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে র‌্যাগিংমুক্ত হতে পারল না, তার প্রমাণ মিলল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই জুনিয়র পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনির (পিজিটি) অভিযোগে।

Advertisement

মঙ্গলবার সেই র‌্যাগিংয়ের লিখিত অভিযোগ ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে জমা দিয়েছেন ওই পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা। অভিযোগের তির একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। মানসিক অত্যাচার, মারধর, থুতু ছিটিয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, ইউজিসি-র নিয়ম মেনে বিষয়টি অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটির তদন্তের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের সুপারিশ করবে ওই কমিটি।

যাদবপুরের ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণ ছিল, হস্টেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বরং হস্টেলে জায়গা দখল করে থাকা কয়েক জন প্রাক্তনীর দৌরাত্ম্য চলত। অন্য দিকে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যে অভিযোগ উঠেছে, তা শুধু হস্টেলেই নয়, ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটারের মধ্যেও ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবু কেন কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষো জানার পরেও সিনিয়র বা শিক্ষক-চিকিৎসকেরা কেন প্রতিবাদ করেননি, তা নিয়েও সরব কলকাতা মেডিক্যালের ‘রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’। অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘এত দিন ধরে ঘটনা ঘটলেও আমাকে কেউ জানাননি। লিখিত অভিযোগ পেয়েই তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। তারা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। কোনও ভাবেই র‌্যাগিং বরদাস্ত করা হবে না।’’

Advertisement

এ দিন প্রকাশ্যে আসে যে, অর্থোপেডিক বিভাগের ইউনিট-১-এর প্রথম বর্ষের দুই পিজিটি, বিট্টু ধর এবং জনসন প্রবীণ অম্বেডকরের উপরে ওই বিভাগেরই দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসক প্রায় তিন মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ চালাচ্ছেন। অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই কখনও রোগী বা তাঁদের পরিজনদের সামনেই অশ্লীল ভাষায় কথা বলা হচ্ছে। কখনও তীব্র গালিগালাজ করে মারধরও করা হয়েছে। আরও অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটারে এবং নার্সদের সামনেই ওই দু’জনের মধ্যে এক পড়ুয়া-চিকিৎসকের দিকে যন্ত্রপাতি ছোড়া হয়েছে। আবার অন-কল রুমে নিয়ে গিয়ে অন্য জনের পেটে এমন ঘুষি মারা হয়েছিল যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এমনকি, মুখে থুতু ছেটানোর অভিযোগও উঠেছে।

প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের জেরে ওই দুই পিজিটি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা চলছে বলে অধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে ‘মেডিক্যাল কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। এ দিন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংগঠনের তরফে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি করা হয়েছে। খাস কলকাতা মেডিক্যালে এমন র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য সমাজমাধ্যমেও তুলে ধরেছেন ‘মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’।

তবে, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি দুই নিগৃহীতই। রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই দুই পিজিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন