বিদ্যাসাগর সেতু রক্ষায় ২০০ কোটি

টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ওই কাজ শুরু হবে বলে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) সূত্রে খবর। 

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০১:৪০
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা তৈরি করেছে উপদেষ্টা সংস্থা রাইট্‌স। বিদ্যাসাগর সেতু বলেও পরিচিত ওই সেতুর স্বাস্থ্য কেমন

Advertisement

আছে তা জানতে সেটির কেব‌্‌লে বসানো হবে সেন্সরও। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ওই কাজ শুরু হবে বলে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) সূত্রে খবর।

অত্যধিক যানবাহনের চাপে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে বছর দু’য়েক ধরেই নানা মহলে উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজারের বেশি যানবাহনের যাতায়াতে সেতুর বিভিন্ন অংশ দুর্বল হয়ে পড়ছে কি না তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। প্রায় এক বছর ধরে সেতু পরীক্ষা করে এ নিয়ে এইচআরবিসির কাছে প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাইট্‌স।

Advertisement

উপদেষ্টা সংস্থা রাইট্‌স (রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল ইকনমিক সার্ভিস) সূত্রে খবর, সেতু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাদের রিপোর্টে।

ব্যস্ত সেতু হিসেবে গুরুত্বের কথা ভেবে সেটির স্বাস্থ্যে কী বদল হচ্ছে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত নজরদারি চালানোর জন্য অত্যাধুনিক সেন্সর বসানোর সুপারিশ করেছে রাইট্‌স। সেতুর উপরে থাকা ১৫২টি কেব্‌লের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি কেব‌্‌লে সেন্সর বসানোর কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। ওই কেব‌্‌লগুলিতে কতটা চাপ পড়ছে, সেখানে কোনও ভাবে টানের হেরফের হচ্ছে কি না তার সব কিছুই ওই সেন্সরে ধরা পড়বে। সেখানে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্মও থাকবে। সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি নিজেদের দফতরে বসে দেখা ও বিশ্লেষণের কাজ করতে পারবেন এইচআরবিসির আধিকারিকেরা।

রাইট্‌স সূত্রে খবর, সেতুর ১৫২টি ঝুলন্ত কেব‌্‌লের মধ্যে ১২টিকে ধাপে ধাপে বদলানোর কথা বলা হয়েছে তাদের রিপোর্টে। এ ছাড়াও দু’পাশে সেতুর স্তম্ভের ভিতর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা ১৬টি ‘হোল্ডিং-ডাউন’ কেব‌্‌লও বদল করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই কাজ করার জন্য সেতু পুরোপুরি বন্ধ রাখার প্রয়োজন পড়বে না। দু’পাশের লেন বন্ধ রেখেই ওই কাজ করা যাবে।

তবে, সেতুর বেয়ারিং বদল করার জন্য সাময়িক ভাবে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেতু বন্ধ রাখার প্রয়োজন হতে পারে বলে রাইট্‌স সূত্রে খবর। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ক্ষেত্রে মোট ৩০টি বেয়ারিং বদল করতে হবে বলে খবর।

সেতুর কেব‌্‌লগুলির অবস্থা বুঝতে খুঁটিয়ে তার ‘ক্লান্তি যাচাই’ (ফ্যাটিগ টেস্ট) করার পরীক্ষা করার সুপারিশও করেছে উপদেষ্টা সংস্থাটি। ব্যস্ত সেতুতে ক্রমাগত যান চলাচলের ফলে সেতুর বিভিন্ন অংশে এক ধরনের ক্লান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেতুর সহনসীমার মধ্যে যান চলাচল করলেও ঘন ঘন যানবাহনের ভর জনিত চাপ পড়া এবং ওই চাপ ফের মুক্ত হওয়ার ঘটনার জেরে এই ক্লান্তি তৈরি হয়।

সমুদ্রের কাছাকাছি উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে সেতুর বিভিন্ন অংশের ক্ষয় রোধ করার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন রাইট্‌সের কর্তা পঙ্কজকুমার সিংহ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সেতুটিকে তার পূর্ণ ক্ষমতায় ধরে রাখতে গেলে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তারই সুপারিশ করা হয়েছে।’’

রোদ এবং অতিবেগুনি রশ্মি ছাড়াও সেতুর কেব‌্‌লগুলিকে দুর্ঘটনাজনিত আগুন থেকে বাঁচাতেও নির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে রাইট্‌স। সংস্থার দাবি, ট্যাঙ্কারে পেট্রোলিয়াম বা অতি দাহ্য গ্যাস নিয়ে সেতু দিয়ে যাতায়াতের সময়ে কোনও কারণে আগুন লাগলে প্রবল তাপে সেতুর কেব‌্‌ল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই ক্ষতি এড়াতে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত কেব‌্‌লে বিশেষ রাসায়নিকের প্রলেপ লাগানোর কথা বলা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় ওই প্রলেপ ফুলে উঠে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাপরোধী আবরণ তৈরি করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন