রাজারাম ঢালি
নিত্যদিনের অশান্তিতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সেই কারণেই বাবা বলাই ঢালিকে খুন করেছে সে। পুলিশের দাবি, জেরায় শনিবার এমনটাই জানিয়েছে পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার অহল্যানগরের যুবক রাজারাম। পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ বছর বাইশের ওই যুবক থানায় ঢুকে জানায়, সে আত্মসমর্পণ করতে চায়। কারণ, সে নিজের বাবাকে গলা টিপে খুন করেছে। থানার অফিসারেরা বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে রাজারামের বাড়িতে গিয়ে বাবা বলাইয়ের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, বছর সাতেক আগে বলাইবাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী (রাজারামের মা) মারা যান। তার ছ’মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন বলাইবাবু। কিন্তু সৎমায়ের সঙ্গে বনিবনা হত না রাজারামের। এ নিয়ে বাবার সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু দিনের মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বলাইবাবুরও অশান্তি শুরু হয়। যার জেরে ওই মহিলা বাপের বাড়ি চলে যান। তাঁর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ না হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি তৃতীয় এক মহিলাকে
বিয়ে করেন বলাইবাবু। ওই ঘটনা রাজারাম মেনে নিতে পারেনি। বছর কয়েক আগে বলাইবাবুর তৃতীয় স্ত্রী-ও বাপের বাড়ি চলে যান। তখন দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে ফের সম্পর্ক জোড়া লাগান বলাইবাবু। তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু গত বছর তিনি ফের বলাইবাবুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাপের বাড়ি চলে যান।
পুলিশের দাবি, রাজারাম জানায়, এই সব নিয়ে সাত বছর ধরে বাবার সঙ্গে দীর্ঘ অশান্তিতে সে জেরবার হয়ে পড়েছিল। খুব কম বয়স থেকে সে কখনও মোবাইলের দোকানে, কখনও বা খাবারের দোকানে কাজ করেছে। কিছু দিন আগে নিজেই পাড়ায় একটি খাবারের দোকান খোলে ওই যুবক। দোকানের আয় থেকে প্রতিদিন বাবাকে ৩০০ টাকা করে দিত সে। তা সত্ত্বেও বলাইবাবু ছেলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ পড়শিদের।
পুলিশ জানায়, মাস দেড়েক আগে একটি মোটরবাইক কেনেন বলাইবাবু। বাইক কিনতে বাবাকে বেশ কিছু টাকাও সে দিয়েছিল বলে জেরায় রাজারাম জানিয়েছে। এ দিন সকালে রাজারামদের বাড়িতে গিয়ে দেখা
যায়, টিনের গেটে তালা ঝুলছে। রাজারামের বন্ধু আকাশ সানা জানালেন, পুলিশই ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ঘর থেকে রক্তে মাখা কয়েকটি জামাকাপড় নিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, রাজারাম জেরায় জানিয়েছে, সে গলা টিপে ধরতে বলাইবাবুর মুখ দিয়ে রক্ত বেরোয়, যা তার জামাকাপড়ে লেগে যায়। পাড়ার লোকজন পুলিশকে জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রাজারাম স্থানীয় বাসিন্দা ভোলা মণ্ডলকে বলে, ‘বাবাকে গলা টিপে শেষ করে দিয়ে থানায় যাচ্ছি। তোমরা এ বার বুঝে নাও।’
রাজারামের বন্ধু ও প্রতিবেশীরা জানান, বলাইবাবুর জন্যই অবসাদে ভুগত ওই যুবক। মাধ্যমিকে একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আর লেখাপড়া করেনি। এলাকার লোকজন তাকে ‘ভাল ছেলে’ বলেই জানতেন। বলাইবাবু সম্পর্কে তাঁদের অভিযোগ, তিনি বদমেজাজি ছিলেন। পাড়ার লোকজনের সঙ্গে মিশতেন না। পেশায় গাড়িচালক বলাইবাবু নির্মাণ সামগ্রীর সিন্ডিকেটেও যুক্ত ছিলেন।