Keshtopur Fire

আগুন থেকে সিলিন্ডার ফেটে কেষ্টপুরে জখম ২৩

বিধাননগর পুর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। তবে, অতীতে কেষ্টপুর, রবীন্দ্রপল্লি কিংবা সল্টলেকের এফডি বাজার, ফাল্গুনী বাজারে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৪
Share:

সিলিন্ডার ফাটার পরে ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক আহতকে। বৃহস্পতিবার, কেষ্টপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা। রাস্তার ধারে বন্ধ থাকা পরোটার দোকান থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। ভিতরে আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে লাগোয়া দোকানগুলির লোকজন নিজেদের জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত। রাস্তার উল্টো দিক থেকে ধোঁয়া বেরোনোর দৃশ্য দেখছেন কৌতূহলী লোকজন। ভিডিয়ো তুলছেন কেউ কেউ। রাস্তার ধারে দোকানে আগুন লেগেছে দেখে যানবাহনও গতি কমিয়েছে। এর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। বন্ধ দোকান ভেঙে ছিটকে এল আগুনের গোলা। দোকানের শাটার উড়ে গিয়ে পড়ল উল্টো দিকে, একটি ওষুধের দোকানের কাচের দেওয়ালে। আতঙ্কে দৌড়োদৌড়ি, আর্তনাদ শুরু করলেন অনেকে।

Advertisement

এ দিন ভয়াবহ এই বিস্ফোরণ ঘটে বিধাননগর পুরসভা এলাকার কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লি বাজারে। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে ওই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৩ জন ঝলসে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ন’জনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। তবে, কারও মৃত্যু হয়নি। এই ঘটনার পরে বিভিন্ন দোকানে অগ্নি-বিধি না মেনেই গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

যে দোকানে সিলিন্ডার ফাটে, সেখানে পরোটা-সহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি হয়। বেলার দিকে দোকানের শাটার নামিয়ে মালিক বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তার খানিক বাদেই দোকানের ভিতর থেকে গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন বাড়তে পারে আশঙ্কা করে আশপাশের দোকানিরা জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন। ওই বাড়িতে দোকানের উপরের বাসিন্দাদেরও বলা হচ্ছিল, নেমে আসার জন্য। এরই মধ্যে সিলিন্ডার ফাটায় পথচারী ও মোটরবাইক আরোহী-সহ অনেকে জখম হন।

Advertisement

সঞ্জয় দে, দীপক মিশ্র, রাজেশ প্রসাদদের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে বুঝেই উঠতে পারছিলেন না যে, সিলিন্ডার ফেটেছে, না কি বোমা। জলের ব্যবসায়ী সঞ্জয়ের শরীরের উপরিভাগ গুরুতর ভাবে ঝলসে গিয়েছে। কেষ্টপুরের একটি নার্সিংহোমে ড্রেসিং চলাকালীন থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আগুন লেগেছে দেখে লোকজনকে সরাচ্ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরণ। সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।’’

সিলিন্ডার ফাটার আগে ওই পরোটার দোকানের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপক মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘কী হল, বুঝলাম না। বিকট একটা শব্দ। পরমুহূর্তে মনে হল, গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। শরীর জ্বলে যাচ্ছিল।’’ পুলিশ জানায়, পরোটার দোকানের মালিককে খোঁজা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তাঁর হদিস নেই। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক বিভাগও।

স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি মণীশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যত দূর জেনেছি, ছেলেটি দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে, ভিতরে গ্যাস লিক করে কোনও ভাবে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই এলাকায় বহু দোকানেই রান্না হয় এলপিজি গ্যাসে। তারা অগ্নি-বিধি কতটা মানছে, তা খতিয়ে দেখতে দিন পনেরো আগে প্রশাসনের সব স্তরে চিঠি দিয়েছি।’’ পরোটার দোকানের উল্টো দিকের ওষুধের দোকানের মালিক তরুণ সাহার কথায়, ‘‘ভয়ঙ্কর আওয়াজ। রাস্তার ওই দিক থেকে শাটার উড়ে এসে পড়ল আমার দোকানে।’’ সিলিন্ডার ফাটার জেরে সামনের রাস্তায় বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার, বাতিস্তম্ভ, বিদ্যুতের তার দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। বিদ্যুতের তারের আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দমকল সেই আগুন নেভায়।

উল্লেখ্য, বিধাননগর পুর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। তবে, অতীতে কেষ্টপুর, রবীন্দ্রপল্লি কিংবা সল্টলেকের এফডি বাজার, ফাল্গুনী বাজারে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সে সব জায়গাতেও রাখা ছিল রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। ফাল্গুনী বাজারের অগ্নিকাণ্ডে একাধিক সিলিন্ডার ফেটেছিল। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় এমন বিপজ্জনক ভাবে ব্যবসা করা বন্ধ করতে পারেনি পুরসভা কিংবা নগরোন্নয়ন দফতর। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) রাজেশ চিরিমার বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাও আতঙ্কিত। আজকের ঘটনায় প্রশাসনিক পর্যায়ে সতর্কতা আসা দরকার। আবাসিক এলাকায় এ ভাবে রান্না করে খাবার বিক্রি বন্ধ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন