মুঙ্গের থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে গ্রেফতার তিন

এ যেন ফেরিয়ালা। তবে সঙ্গে ঝুড়ি নেই, বদলে রয়েছে সফ্‌ট লাগেজ। বিহার থেকে যার মধ্যে ওয়ান শটার ও সেভেন এমএম পিস্তল ভর্তি করে নিয়ে এসে বিক্রি হচ্ছিল এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৮
Share:

এ যেন ফেরিয়ালা। তবে সঙ্গে ঝুড়ি নেই, বদলে রয়েছে সফ্‌ট লাগেজ। বিহার থেকে যার মধ্যে ওয়ান শটার ও সেভেন এমএম পিস্তল ভর্তি করে নিয়ে এসে বিক্রি হচ্ছিল এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। খবর ছিল অস্ত্র নিয়ে কলকাতাতেও ঢুকবে ওই ‘ফেরিওয়ালারা’। এর পরেই বুধবার কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রের খাদান বিহারের মুঙ্গের থেকে আসা এমনই তিন অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করল দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের গোয়েন্দারা। ধৃতদের নাম রাজেন্দ্র প্রসাদ, কৃষ্ণা প্রশান্ত ও চন্দন কুমার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী জানান, ধৃতদের কাছ থেকে বহু ওয়ান শটার ও সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে লক্ষাধিক নগদ টাকাও। তদন্তকারীদের দাবি, অস্ত্র বিক্রির করেই ওই টাকা মিলেছে বলে জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বুধবার বারুইপুরের বেগমপুর থেকে বাপি হালদার নামে এক অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। তার মোবাইল থেকেই বিহারের তিনটি নম্বর মেলে। ওই নম্বরগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মোবাইলের গ্রাহকেরা বাগনানে রয়েছে। তার পর থেকে তিন জনের উপরে নজরদারি শুরু হয়। বাপিকে জেরায় জানা যায়, বুধবার রাতে ওই তিন জন কলকাতা লেদারকমপ্লেক্স থানা এলাকায় অস্ত্র নিয়ে আসবে। কোন এলাকায় আসবে তা-ও জানায় বাপি। ওই তিন জনের মোবাইলে আড়ি পেতে জানা গিয়েছিল, তারা বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে আসবে। এক তদন্তকারীর কথায়, চালক-সহ তিন জন একটি কালো গাড়িতে রয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। এর পরেই বিহারের নালন্দা জেলার নম্বর লেখা একটি কালো গাড়ি এলে সেটিকে ঘিরে ফেলে সাদা পোশাকের পুলিশবাহিনী। ওই গাড়ি থেকে বিহারের বাসিন্দা রাজেন্দ্র, কৃষ্ণা ও চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়। গাড়ি থেকে মেলে দু’টি বড় সফ্‌ট লাগেজ। একটি ছিল একদম ফাঁকা, অন্যটি থেকে ১০টি ওয়ান শটার ও সাতটি সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়। এক তদন্তকারীর কথায়, দু’টি ব্যাগেই অস্ত্র ভরে আনা হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনা ও হাওড়ার স্থানীয় এজেন্টদের তা পাচার করা হয়েছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতেরা। বাকি কয়েকটি অস্ত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকায় বিক্রি করবে বলে আনা হচ্ছিল বলে জানায় তারা।

কী ভাবে বারুইপুরের অস্ত্র কারবারি বাপি হালদারের সঙ্গে মুঙ্গেরের এই তিন জনের যোগসাজস? তদন্তকারীদের কথায়, আদতে বাপি অস্ত্রের কারিগর। বছর সাতেক হল সে মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। সে মুঙ্গেরর অস্ত্র কারবারিদের স্থানীয় মিস্ত্রি। মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিদের কাছ থেকে কেনা অস্ত্র বিকল হয়ে গেলে বাপির কাছে খবর দেওয়া হত। ওই অস্ত্র নিয়ে এসে নিজের বাড়ি লাগোয়া একটি ঘরে আরও তিন জনকে নিয়ে সারাইয়ের কাজ করত সে।এক তদন্তকারীর কথায়, অস্ত্র মেরামতের পাশাপাশি মুঙ্গের থেকে আনা অস্ত্র বিক্রিও করত বাপি। বুধবার বাপির কাছ থেকে মুঙ্গেরে তৈরি দু’টি ওয়ান শটার পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। বাপি নিজের কারাখানায় কার্তুজও তৈরি করত বলে অনুমান করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে কয়েকটি অর্ধ-নির্মিত কার্তুজও উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন