স্বজন-যোগে তিনটি খুন

মহানগরের তিন প্রান্তে তিনটি খুন! ঘটনাগুলির মধ্যে আপাত ভাবে যোগসূত্র না থাকলেও সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে পরিবারের সদস্যের দিকে। বন্দর এলাকার রাজাবাগানে পিসির বঁটির কোপে প্রাণ হারিয়েছে আট বছরের এক শিশু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৪
Share:

মহানগরের তিন প্রান্তে তিনটি খুন! ঘটনাগুলির মধ্যে আপাত ভাবে যোগসূত্র না থাকলেও সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে পরিবারের সদস্যের দিকে। বন্দর এলাকার রাজাবাগানে পিসির বঁটির কোপে প্রাণ হারিয়েছে আট বছরের এক শিশু। দক্ষিণ শহরতলির গরফায় এক প্রৌঢ়ার মৃত্যুতে তাঁর ছেলে অভিযোগ করেছে বাবার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে ওই ব্যক্তি পলাতক। সল্টলেকের ছয়নাভিতে এক মহিলার দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

এমন প্রবণতাকে কী চোখে দেখছে সমাজ? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘এই ধরনের সম্পর্কগুলোকে আমরা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বলে ভাবতাম, যার ফলে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকে। ইদানীং সেই নির্ভরতা ও ভরসার জায়গাটা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। পরিবারের মধ্যেই যদি বিশ্বাসের ভিতটা নড়ে যায়, তা হলে বৃহত্তর সামাজিক বন্ধনের ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা ভেবে ভয় হয়।’’

মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে রাজাবাগানের পাঁচপাড়া রোডে। মাঝরাতে ছোট্ট ছেলেটির চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বাড়ির লোকের। তাঁরা এসে দেখেন, ঘরের ভিতরে রক্তমাখা বঁটি হাতে দাঁড়িয়ে বাড়ির মেয়ে জ্যোৎস্না। গলার নলি কাটা অবস্থায় খাটে পড়ে রয়েছে তাঁর আট বছরের ভাইপো আব্দুল রকিব মোল্লা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ভাইপোকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোৎস্না বিবিকে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেই বঁটি। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, জ্যোৎস্না মানসিক রোগী। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। রকিবের বাবা আব্দুল মালিক মোল্লার বোন জ্যোৎস্নার বিয়ে হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি বাপের বাড়ি চলে আসেন জ্যোৎস্না। রাতে পিসি এবং ঠাকুরমার কাছেই ঘুমোত রকিব। সম্প্রতি ঠাকুরমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় জ্যোৎস্নাই শিশুটিকে নিয়ে ঘুমোতেন। তিনিই কেন এ ভাবে ভাইপোর গলার নলি কেটে দিলেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না এলাকাবাসীরা।

ওই রাতেই গরফার বিবেকনগরে এক প্রৌঢ়াকে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। মৃতার নাম দীপা দাস (৫৫)। পুলিশ জানায়, সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে দীপাদেবীর ছেলে শুভজিৎ দেখেন, মায়ের ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। সন্দেহ হওয়ায় ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন, ওড়নার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মা পড়ে আছেন। খোঁজ নেই বাবার।

শুভজিৎ তাঁর বাবা কল্যাণ দাসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন। বুধবার রাত পর্যন্ত কল্যাণবাবুর খোঁজ মেলেনি। শুভজিৎ বলেন, ‘‘ঘরে মা-বাবা ছাড়া কেউ ছিল না। আমি ফেরার পরে বাবাকে দেখিনি। বাবাই খুন করেছে মাকে।’’

পরিবার সূত্রের খবর, দীপাদেবীর স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে কল্যাণবাবুই তাঁর দেখভাল করতেন। শুভজিৎ দাবি করেছেন, চিকিৎসার খরচ নিয়েও নাজেহাল ছিলেন তাঁর বাবা। কী কারণে তিনি হঠাৎ এমন করলেন, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

অন্য দিকে, সল্টলেকের ছয়নাভিতে এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মৃতার নাম প্রমীলা সিংহ।

পুলিশ জেনেছে, বিবাহবিচ্ছিন্না প্রমীলাকে বিয়ে করেছিলেন অরূপ। কিন্তু অভিযোগ, অরূপের পরিবার প্রমীলাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর বচসা হতো। প্রমীলার বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বচসার জেরেই অরূপ ও তাঁর মা সরলা সিংহ প্রমীলাকে খুন করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন