সেচে প্রয়োজন কতটা জল, বাতলাবে পড়ুয়াদের তৈরি যন্ত্র

জমিতে সেচের জন্য পাম্পসেট চালিয়ে চলে গিয়েছেন চাষি। পাম্পের পাইপ থেকে টানা জল পড়েই চলেছে। গ্রাম-গঞ্জের মাঠেঘাটে এমন দৃশ্য অচেনা নয়। শহরতলি বা মফস্সলে যাদের বাড়িতে বাগান রয়েছে, একই দৃশ্য মিলবে সেখানেও। কলের পাইপ দিয়ে বাগানের মাটি ভেজাচ্ছেন গৃহস্থ। অনেক সময় বে-খেয়ালে জল হয়তো বেরিয়েই চলেছে। কিন্তু গেরস্থের ভ্রূক্ষেপ নেই!

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:০০
Share:

যন্ত্রের প্রদর্শনীতে তুহেলী ও তাঁর বন্ধুরা। — নিজস্ব চিত্র।

জমিতে সেচের জন্য পাম্পসেট চালিয়ে চলে গিয়েছেন চাষি। পাম্পের পাইপ থেকে টানা জল পড়েই চলেছে। গ্রাম-গঞ্জের মাঠেঘাটে এমন দৃশ্য অচেনা নয়।

Advertisement

শহরতলি বা মফস্সলে যাদের বাড়িতে বাগান রয়েছে, একই দৃশ্য মিলবে সেখানেও। কলের পাইপ দিয়ে বাগানের মাটি ভেজাচ্ছেন গৃহস্থ। অনেক সময় বে-খেয়ালে জল হয়তো বেরিয়েই চলেছে। কিন্তু গেরস্থের ভ্রূক্ষেপ নেই!

পরিবেশবিদেরা বলছেন, বৃষ্টির ধরন বদলানোয় এমনিতেই ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। সেই অবস্থায় জলের এই ধরনের অপচয় ভবিষ্যতে জলসঙ্কট ডেকে আনতে পারে। যার মাসুল গুনতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। তা হলে উপায় কী? চাষের বা বাগানের জমি ভেজাতে ঠিক কতটা জল লাগবে, সেটা কি কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব? নাকি সে ভাবে পাম্প চালানো যায়?

Advertisement

প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবেশকর্মীদের মধ্যেও। কেউ কেউ বলছেন, এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিই একমাত্র ভরসা। তা না হলে সেচে কতটা জল লাগবে, বোঝা সম্ভব নয়। একই কথা বলছেন লিলুয়ার এমসিকেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তিন পড়ুয়া তুহেলি ভট্টাচার্য, রাহুল রায় এবং সুমিত সাহাও। ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি পথও বাতলেছেন তাঁরা। নাম দিয়েছেন ‘স্মার্ট ইরিগেশন সিস্টেম’। তাঁদের দাবি, এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

কী ভাবে?

ওই পড়ুয়ারা জানান, ভিজে ভাব বা আর্দ্রতা ধরার উপযোগী সেন্সর চাষের বা বাগানের জমিতে পোঁতা থাকবে। মাটি পর্যাপ্ত ভাবে ভিজলেই সেন্সর সেই বার্তা পৌঁছে দেবে পাম্পের সঙ্গে থাকা মূল সার্কিট বোর্ড বা ‘আর্ডুইনো ডিভাইসে’। সেন্সরের বার্তা বুঝে সেটি পাম্প বন্ধ বা চালু করবে। ‘‘এই আর্ডুইনো-ই হচ্ছে গোটা ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র,’’ বলছেন তুহেলি।

ওই পড়ুয়াদের দাবি, এই ব্যবস্থা পরীক্ষাগারে সফল হয়েছে। বিষয়টিকে আরও উন্নত করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করছেন তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তিন পড়ুয়ার এই কাজ কি আদৌ বাস্তবে কাজে লাগবে? গ্রামবাংলার সাধারণ চাষিরা কি এই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন?

এই ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে, তা মানছেন ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই। সরকারি সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, ‘‘পাম্পসেট স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ করার নানা পন্থা রয়েছে। জমিতে আর্দ্রতা ধরার সেন্সর দিয়েও সেই কাজ করা সম্ভব। ফলে যে প্রযুক্তির কথা ওই তিন পড়ুয়া বলছেন, তা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না।’’

পড়ুয়াদের এই ধরনের কাজ অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে কাজে লাগে বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক অরিন্দম শীল। তাঁর মতে, যে প্রযুক্তির কথা ওই পড়ুয়ারা বলছেন তার ভাবনাচিন্তা বাস্তবে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কারণ, বয়স এবং অভিজ্ঞতা কম হলেও পড়ুয়ারা পড়ার সময়ে এমন অনেক ভাবনাচিন্তার জোগান দেয় যেগুলি নিয়ে ভবিষ্যতে উন্নত যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

তবে পরীক্ষাগারে তৈরি যন্ত্র যে সব সময়ে একেবারে মাঠেঘাটে কাজে লাগবে, তেমনটা না-ও হতে পারে। বরং পরীক্ষাগারের ভাবনাচিন্তা থেকে কাজের উপযোগী যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও কিছু গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে অভিজ্ঞতারও। যন্ত্র কী ভাবে বাজার-উপযোগী করে তোলা যায়, সেটাও দেখা প্রয়োজন। প্রাথমিক ভাবে ওই তিন পড়ুয়া যন্ত্র নির্মাণে পরীক্ষাগারে যে সব সেন্সর ব্যবহার করেছেন, তার খরচ যথেষ্ট বেশি। তবে তুহেলির দাবি, ‘‘ধাতব পাত দিয়েও এই কাজ করা সম্ভব। সেটা কী ভাবে করা যায়, তা নিয়েও আমরা ভাবছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন