‘সোনার খনি’ দখল করতে যুযুধান সিন্ডিকেট

কসবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিকপল্লি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি এখন এটাই। শাসক দলের মদতেই যে সিন্ডিকেট-চক্র এতটা বেপরোয়া, সে অভিযোগ করছেন পুলিশ কর্তারাও।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৫০
Share:

নারকেলবাগান এলাকার একটি অবৈধ নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে ই এম বাইপাস। অন্য দিকে মূল শহর। আর তার পাশেই ‘সোনার খনি’! দ্রুত বাড়ছে জমি-বাড়ির দাম। ব্যবসা ফেঁদে বসলেই কোটি কোটি টাকা হাতের মুঠোয়। কিন্তু তার জন্য যে ভাবেই হোক দখলে রাখতে হবে এলাকা। সেই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়েই নেমেছে ৩৫টি সিন্ডিকেট।

Advertisement

কসবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিকপল্লি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি এখন এটাই। শাসক দলের মদতেই যে সিন্ডিকেট-চক্র এতটা বেপরোয়া, সে অভিযোগ করছেন পুলিশ কর্তারাও। এক তদন্তকারী জানান, বছরখানেক আগে ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের মন্দিরপাড়া এলাকায় রাজ্যের এক পুলিশকর্তার বাড়ির নির্মাণকাজেও সিন্ডিকেটের শাসানির মুখে পড়েছিলেন ঠিকাদার। পরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়।

এই ওয়ার্ড ‘সোনার খনি’ কেন?

Advertisement

ই এম বাইপাস লাগোয়া ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যক্তিগত মালিকানার বহু খালি জমি রয়েছে এখনও। রয়েছে বহু সরকারি খাস জমিও। ধানমাঠ, অমরাবতী, পি মজুমদার, রুবি পার্ক, যোগেন্দ্র গার্ডেন, রাজডাঙা, চক্রবর্তীপাড়া, ইন্দু পার্কের মতো এলাকায় এখন নির্মাণকাজের ছড়াছড়ি। টাকা উড়ছে। আর ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ থেকে ঠিকাদারি— সবই সিন্ডিকেটের দখলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিটি সিন্ডিকেটই শাসক দলের কোনও না কোনও নেতার।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ থেকে ৩৫টি সিন্ডিকেটের প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ছেলে রয়েছে। ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটের অফিস।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। শুধু নির্মাণকাজে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহই নয়, সরকারি খাস জমি দখল করে পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ ভাবে ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করে দিচ্ছে বেশ কিছু সিন্ডিকেট। এ ভাবেই আসছে কোটি কোটি টাকা।

ওই এলাকার এক প্রোমোটারের কথায়, ‘‘প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ খরচ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর অবৈধ ভাবে তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে বর্গফুট প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজারে। তা হলে প্রতি বর্গফুটে মুনাফা হাজার দেড়েক টাকা। এক কাঠা জমি সাড়ে সাতশো বর্গফুট। সে ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ কাঠা জমিতে চার-পাঁচতলা ফ্ল্যাট তুলে ফেললে কয়েক লক্ষ টাকা অনায়াসে চলে আসছে।

এলাকার কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা সবাই করতে পারেন। বাধা দেওয়ার কোনও উপায় নেই।’’ কিন্তু পুরসভার নাকের ডগায় অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে কী ভাবে? সুশান্তবাবুর দাবি, ‘‘অভিযোগ পেলে আমি পুলিশকে জানাই।’’ কী বলছে পুলিশ? এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অভিযোগ পেলেই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, সাময়িক ভাবে বন্ধ হয় ঠিকই। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ফের কাজ শুরু হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন