মেডিক্যালে এক বছরে চার অধ্যক্ষ, থমকে বহু কাজ

হাসপাতালেরই একাংশ জানাচ্ছেন, বারবার অধ্যক্ষ বদলের জেরে থমকে যাচ্ছে হাসপাতালের পরিকল্পনা সংক্রান্ত কাজ। তবে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পছন্দের ‘প্রার্থী’ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই কাউকে স্থায়ী ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না— এমনই কথা ঘুরছে হাসপাতালের অন্দরে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৩
Share:

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক বছরে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসলেন চার জন। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র পাওয়া গেল না। উল্টে ওই পদে স্থায়ী ভাবে কেউ না থাকায় ওষুধের জোগান থেকে শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব— সব কিছুতেই জটিলতা বাড়ছে।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তপন লাহিড়ী অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে আড়াই মাসের জন্য অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছিলেন অশোক ভদ্র। তার পরে ওই পদে আসেন উচ্ছ্বল ভদ্র। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি অবসর নিয়েছেন। এর পরে আশিস বসু নভেম্বর মাস পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও অবসর নেওয়ার পরে এখন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান রামানুজ সিংহ।

হাসপাতালেরই একাংশ জানাচ্ছেন, বারবার অধ্যক্ষ বদলের জেরে থমকে যাচ্ছে হাসপাতালের পরিকল্পনা সংক্রান্ত কাজ। তবে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পছন্দের ‘প্রার্থী’ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই কাউকে স্থায়ী ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না— এমনই কথা ঘুরছে হাসপাতালের অন্দরে।

Advertisement

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকার জেরে একাধিক কাজ থমকে রয়েছে। জীবনদায়ী ওষুধ কেনা নিয়ে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেমন, ল্যাসিক্স নামে হার্ট ফেলিওরের একটি ওষুধ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। দাম কম হলেও দিনে প্রায় শ’দে়ড়েক ল্যাসিক্স প্রয়োজন।

শীতে হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ায় এই ওষুধের চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু ফার্মাসি বিভাগ থেকে দিনে মাত্র ২০-২৫টি ল্যাসিক্স সরবরাহ করা হয়। প্রয়োজনে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ওষুধ নিতে হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনে প্রয়োজনের কথা জানিয়ে ওষুধের জোগান বাড়ালেই এই জটিলতা কমবে। কিন্তু সেই কাজ গত কয়েক মাস ধরেই আটকে রয়েছে।

ওষুধের পাশাপাশি কর্মী সঙ্কটেও ভুগছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শিক্ষক-চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী পর্যাপ্ত নেই। কিন্তু কী ভাবে এই সঙ্কট সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, মেডিসিন, সার্জারি কিংবা পেডিয়াট্রিকসের মতো বিভাগে রোগীর চাপ অনেক বেশি। কিন্তু তুলনায় চিকিৎসক কম। চিকিৎসক ঘাটতির বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জানানোও হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটানোর পথ মেলেনি।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য কিংবা প্রশাসনিক জটিলতার রফাসূত্র বার করতে সময়ের প্রয়োজন। অধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ কখনও আড়াই মাস আবার কখনও একমাসের জন্য সামলালে দায়িত্ব বুঝতেই অধিকাংশ সময় কেটে যায়। ফলে জটিল সমস্যার সমাধান সূত্র খুঁজতে যে সময় প্রয়োজন, ভারপ্রাপ্তেরা সেটা পাচ্ছেন না। ফলে, রুটিন কাজ সেরেই অধ্যক্ষের ভূমিকা থমকে যাচ্ছে।

এক বছরেও কেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা গেল না? এ প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও উত্তর দিতে রাজি নন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তবে, ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, ‘‘স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, হাসপাতালের কাজে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন