অপহরণ করে আটকে রেখে গ্রেফতার পাঁচ

পুলিশ সূত্রের খবর, অপহৃত যুবকের নাম অরুণ দাস। বাড়ি নারকেলডাঙা থানা এলাকার মহেশবাড়ি লেনে। পেশায় আলোকচিত্রী অরুণের বন্ধু প্রণব ওই পাড়ারই বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বন্ধুর কথামতো পিকনিক করতে গিয়ে কার্যত ‘পণবন্দি’ হয়ে থাকা এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, অপহৃত যুবকের নাম অরুণ দাস। বাড়ি নারকেলডাঙা থানা এলাকার মহেশবাড়ি লেনে। পেশায় আলোকচিত্রী অরুণের বন্ধু প্রণব ওই পাড়ারই বাসিন্দা। তিনি টিভির বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য ছেলেমেয়েদের সরবরাহ করেন। তাঁকেও অপহরণ করে দু’দিন আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে টাকা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে অভিযুক্তেরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম পার্থ মজুমদার, সুকান্ত মজুমদার, দিব্যেন্দু বিশ্বাস, শরাফত শেখ এবং গৌতম। তাদের প্রত্যেকেরই বাড়ি পূর্বস্থলী এলাকার সাহেবগড়ে। মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক বলে পুলিশ
সূত্রের খবর। ধৃতেরা কয়েক জন প্রণবের পূর্বপরিচিত বলে জেনেছে পুলিশ। শুক্রবার তাদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, পার্থ ও সুকান্তের কাছ থেকে নগদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন প্রণব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না তিনি। ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, বকেয়া টাকা ফেরত না পেয়ে তারা প্রণবকে অপহরণের পরিকল্পনা
করে। সেই মতো কালীপুজোর পরের দিন, ২২ তারিখ চাকদহে পিকনিক আছে বলে প্রণবকে ডেকে পাঠায় তারা। তদন্তকারীরা জানান, প্রণব তাঁর বন্ধু অরুণকে নিয়ে সেখানে হাজির হন। এর পরেই অভিযুক্তেরা দুই বন্ধুকে জোর করে পূর্বস্থলীতে নদীর চরে নিয়ে গিয়ে ‘পণবন্দি’ করে। তার পরে দুই পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে তারা।

Advertisement

লালবাজার জানায়, প্রথমে দুই পরিবারের তরফে নারকেলডাঙা থানায় কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রণবকে টাকা আনতে বলে অভিযুক্তেরা ছেড়ে দেওয়ার পরে তিনি উধাও হয়ে যান। তার পরেই অভিযুক্তেরা অরুণের উপরে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে তাঁর পরিবারকে হুমকি দিয়ে ফোন করতে থাকে। তদন্তকারীরা জানান, অপহরণের পরে প্রথম দু’দিন অভিযোগ দায়ের না হলেও ক্রমাগত হুমকি ফোন পেয়ে নারকেলডাঙা থানার দ্বারস্থ হন অপহৃত অরুণের দাদা অনিল দাস।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, অভিযুক্তেরা সংখ্যায় বেশি থাকায় বিভিন্ন নম্বর থেকে তারা ফোন করছিল অনিলকে। ফলে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিল পুলিশ। পরে জানা যায়, বর্ধমানের কাটোয়ার কাছে একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে অপহৃতকে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ ছিল অপহৃতের যাতে কিছু না হয়, তা নিশ্চিত করা। সেই মতো অপহৃতের দাদাকে বলা হয়, টাকা নিয়ে সেখানে যেতে। সেই সঙ্গে আমাদের একটি দলও ছদ্মবেশে সেখানে যায়।’’

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কথা মতো বর্ধমানের পাটুলি স্টেশনে যান অভিযোগকারী অনিল। সাদা পোশাক পরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন নারকেলডাঙা থানার পুলিশকর্মীরা। কেউ পরেছিলেন পাজামা-পাঞ্জাবি তো কেউ লুঙ্গি। ওই স্টেশনে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল অভিযুক্ত শরাফত। সে অনিলকে নিয়ে প্রথমে গঙ্গার খেয়াঘাটে যায়। কিন্তু তারা পৌঁছনোর আগেই সেখানে হাজির হয়ে যায় তদন্তকারী দলের সদস্যেরা।

পুলিশের দাবি, সন্দেহ হওয়ায় নৌকা চেপে নদীর অপর পাড়ে পৌঁছে ঘাটে অনিলকে অপেক্ষা করতে বলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে শরাফত। কিন্তু পুলিশকর্মীরা নদীর চড়ে তাকে পাকড়াও করে ফেলেন। সেখানেই সে জেরার মুখে জানিয়ে দেয়, অরুণকে অপহরণ করে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ নদীর পাড়ে ঝোপের মধ্যে একটি কুঁড়েঘর থেকে অরুণকে উদ্ধার করে বাকিদের গ্রেফতার করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement