ভোটাধিকার পাভলভের ৫০ সুস্থ আবাসিককে

কেউ পা দিয়েছেন ষাটের কোঠায়। কেউ আবার সদ্য আঠেরোর চৌকাঠ পেরিয়েছেন। কলকাতার পাভলভ হাসপাতালের ক্যান্টিনে ওঁদের কেউ পরোটা-আলুর দম বিক্রি করেন। কেউ হাসপাতালের জামাকাপড় ধুয়ে রোজগার করছেন। সকলেই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা আবাসিক।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
Share:

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল।

কেউ পা দিয়েছেন ষাটের কোঠায়। কেউ আবার সদ্য আঠেরোর চৌকাঠ পেরিয়েছেন। কলকাতার পাভলভ হাসপাতালের ক্যান্টিনে ওঁদের কেউ পরোটা-আলুর দম বিক্রি করেন। কেউ হাসপাতালের জামাকাপড় ধুয়ে রোজগার করছেন। সকলেই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা আবাসিক। মঙ্গলবার ভোটাধিকার পেলেন ওঁরা। হাতে পেলেন সচিত্র পরিচয়পত্র। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এন্টালির ভোটার হিসেবে ওঁরা ভোট দিতে পারবেন।

Advertisement

এর আগে ভোটার কার্ড পেয়েছিলেন কান্দির মানসিক রোগী-আবাসের ১৩ জন। এ বার সেই পথে হাঁটল পাভলভ। এ দিন ৫০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১৬ জনের ভোটার কার্ড পৌঁছে যায় ১৮ নম্বর গোবরা রোডে। বাকিদের কার্ডও ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে কমিশন সূত্রে খবর।

গোটা বিষয়টির সূত্রপাত ২০১৮ সালে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গত বছর নির্বাচন কমিশনের অফিসে যোগাযোগ করে। তার পরেই পাভলভ চত্বরে থাকা পঞ্চাশ জন আবাসিক নতুন ভোটার কার্ডের আবেদন জানান। প্রত্যেকেই আবেদনপত্রের সঙ্গে সুস্থ হয়ে ওঠার শংসাপত্র জমা দেন।

Advertisement

আবেদনপত্রে সকলেরই ঠিকানা, ১৮ নম্বর গোবরা রোড। অর্থাৎ, পাভলভ হাসপাতাল। কারণ, সুস্থ হয়েও ওঁদের বাড়ি ফেরা হয়নি। মনোরোগীর তকমাই রয়ে গিয়েছে নামের সঙ্গে। ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়েছিল ঠিকানা। ওঁদের নিজস্ব বাড়ি নেই। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার কার্ডে ঠিকানা থাকতেই হবে। সমাধানসূত্র হিসেবে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ প্রত্যেক আবেদনকারীর হয়ে কমিশনে চিঠি পাঠান। সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন ওঁরা হাসপাতাল চত্বরে আছেন, তা-ও ব্যাখ্যা করেন।

গণেশবাবু বলেন, ‘‘সরকারি নীতিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ কিছুই থাকে না। অথচ, এ দেশে অসম্ভব ছুতমার্গ রয়েছে। ওঁরা ভোটাধিকার পেলে হয়তো সরকার ওঁদের নিয়েও ভাববে। এই আশা থেকেই আমরা এ কাজে উৎসাহ পেয়েছিলাম।’’

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান রত্নাবলী রায়ের কথায়, ‘‘ভাল লাগছে, ভোটার কার্ডের ঠিকানায় পাভলভের নাম নেই। এটা হয়তো সামাজিক ছুতমার্গ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ওঁদের সাহায্য করবে।’’

এ বছর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য, কাউকে যেন তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা হয়। সেই কারণেই মানসিক হাসপাতালেও পৌঁছে গিয়েছিল কমিশন। কমিশনের কর্তাদের মতে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগে অক্ষম, আদালত যদি এমনটা না বলে, তা হলে সেই অধিকার কারও থেকে কেড়ে নেওয়া যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন