বেহালায় সিলিন্ডার ফেটে আহত ৬

পুলিশ জানিয়েছে, বেহালার ৬৮, বামাচরণ রায় রোডের বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন সঞ্জিত মণ্ডল। তিনি পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। শোয়ার ঘর লাগোয়া রান্নাঘরে রবিবার সকালে গ্যাসে রান্না করছিলেন সঞ্জিতবাবুর স্ত্রী কণিকা মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে রান্নাঘরের ছাদ। রবিবার, বেহালায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সকালে সবে বাজার থেকে ফিরেছিলেন গৃহকর্তা। স্ত্রীকে বাজারের ব্যাগ দিতে তিনি ঢোকেন রান্নাঘরে। পাশেই শোয়ার ঘরে তখনও ঘুমোচ্ছিল তাঁদের ছেলে সুমন। মেয়ে, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সঞ্জনা পড়াশোনা করছিল। আচমকাই গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে আহত হলেন চার জনই। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও দু’জন। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বেহালার বামাচরণ রায় রোডে। আহতদের মধ্যে ওই দম্পতির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বেহালার ৬৮, বামাচরণ রায় রোডের বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন সঞ্জিত মণ্ডল। তিনি পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। শোয়ার ঘর লাগোয়া রান্নাঘরে রবিবার সকালে গ্যাসে রান্না করছিলেন সঞ্জিতবাবুর স্ত্রী কণিকা মণ্ডল। পুলিশ জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তীব্র আওয়াজে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে সঞ্জিতবাবুর বাড়িতে আগুন লেগে যায়। পাশেই রয়েছে তাঁর ভাইয়ের বাড়ি। আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন সঞ্জিতবাবুর বৌদি ঝর্না মণ্ডল। চার জনকে বাঁচাতে তিনি ওই বাড়িতে ঢুকে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁর গায়েও আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ঝর্নাদেবীর মেয়ে সুস্মিতা। মায়ের পোশাকে আগুন লেগে গেছে দেখে বাড়ির মধ্যে গেলে অগ্নিদগ্ধ হন তিনিও।

বিস্ফোরণের শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে আহত ছ’জনকে উদ্ধার করেন। তাঁরাই প্রথমে তিন জনকে স্থানীয় বিদ্যাসাগর হাসপাতাল ও অন্যদের এম আর বাঙুর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। খবর দেওয়া হয় দমকল ও পুলিশকে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এসে আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে সুস্মিতা মণ্ডলকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠানো হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কণিকাদেবী, তাঁর ছেলে সুমন এবং মেয়ে সঞ্জনা এম আর বাঙুরে ভর্তি। সঞ্জিত ও ঝর্নাদেবীকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জিত ও তাঁর স্ত্রী কণিকার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisement

রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বিস্ফোরণে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির একাংশ উড়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে বাড়ির বেশির ভাগ অংশ। স্থানীয় কলেজের ছাত্রী সুস্মিতা বলেন, ‘‘সকাল সা়ড়ে ন’টা নাগাদ বাজ পড়ার মতো আওয়াজ শুনতে পাই। মা গিয়ে দেখে, কাকার বাড়ি জ্বলছে। ওদের বাঁচাতে মা বাড়িতে ঢুকে পড়ায় মায়ের শাড়িতে আগুন লেগে যায়। মায়ের অবস্থা দেখে আমিও ওই বাড়িতে ঢুকে প়়ড়ি।’’ আগুনের হল্কায় সুস্মিতার মুখ, হাত, পা পুড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জ্বলন্ত বাড়িতে ঢুকে আমাদের উদ্ধার করেন স্থানীয়েরা।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বামী-স্ত্রী রান্নাঘরে থাকায় তাঁদের শরীরের বেশির ভাগ অংশ পু়ড়ে গিয়েছে।

জ্বলন্ত বাড়ির মধ্যে আটকে পড়া ওই ছ’জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে সামান্য আহত হন প্রতিবেশী গৌতম ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে বিকট শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, বাড়ির মধ্যে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আটকে রয়েছেন ছ’জন। আমরা তাঁদের উদ্ধার করে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠাই।’’ এ দিনের ঘটনার পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

অন্য দিকে, এ দিনই দুপুরে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগে কৈলাস বসু স্ট্রিটের একটি বাড়ির রান্নাঘরে। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে কিছু ক্ষণেই আগুন নেভায়। ঘটনায় হতাহতের খবর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন