মুম্বই বিস্ফোরণ

৭/১১-র জঙ্গিরা ছিল এ শহরেই

মুম্বইয়ে ৭/১১-র হামলায় জড়িত জঙ্গিদের একাংশ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতার রাজাবাজারে এসে উঠেছিল। সেখানেই এক যুবকের বাড়িতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাভেল ব্যাগ রেখেছিল প্রায় মাস তিনেক।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০১:০০
Share:

মুম্বইয়ে ৭/১১-র হামলায় জড়িত জঙ্গিদের একাংশ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতার রাজাবাজারে এসে উঠেছিল। সেখানেই এক যুবকের বাড়িতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাভেল ব্যাগ রেখেছিল প্রায় মাস তিনেক। ভাড়াটে রাখলে, বিশেষত একেবারে অপরিচিত কাউকে ঘর ভাড়া দিলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানাকে জানিয়ে রাখা কেন জরুরি, সে প্রসঙ্গে ২০০৬ সালের ওই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দাদের একাংশ। সে বছর ১১ জুলাই মুম্বইয়ে লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক সাতটি বিস্ফোরণে ১৮৯ জন নিহত ও ৮০০-রও বেশি আহত হন।

Advertisement

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে যারা রাজাবাজারে থেকেছিল, মুম্বইয়ে রেকি করে বাংলাদেশে গিয়ে আবার কলকাতার ওই এলাকায় ফিরে এসেছিল বিস্ফোরণের দিন কয়েক আগে। তারা অবশ্য ভাড়াটে হিসেবে আসেনি। রাজাবাজারে এক তরুণীর বিয়ে হয়েছিল বাংলাদেশের এক যুবকের সঙ্গে। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে বহু বরযাত্রী আসেন। তাঁদের মধ্যেই ছিল ওই পাঁচ জনও। মুম্বই পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড তদন্তে নেমে জানতে পারে, পাঁচ জনই পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তইবার সদস্য।

গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ৭/১১ মামলার বিচারে পাঁচ জনের ফাঁসি এবং সাত জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় মুম্বইয়ের আদালতে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম কলকাতার রাজাবাজারের যুবক মহম্মদ মাজিদ শাফি। কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যাকে রাজাবাজার থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় মুম্বই পুলিশ। মাজিদের পাশের বাড়ির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের বরযাত্রী হিসেবেই বাংলাদেশ থেকে এসেছিল সেই পাঁচ পাকিস্তানি যুবক। কিন্তু তারা-সহ ১৫ জন অভিযুক্ত এখনও ফেরার।

Advertisement

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, একটি ছোটখাটো জুতোর দোকানের মালিক মাজিদই ওই পাঁচ পাকিস্তানি যুবকের মধ্যে চার জনকে বেআইনি ভাবে বাংলাদেশের সীমান্ত পারাপারে সাহায্য করেছিল। আর ৭/১১–তে ব্যবহৃত বিস্ফোরক ঘটনার আগে মাস তিনেক রাখা হয়েছিল মাজিদেরই বাড়িতে। বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে আলাপ জমানোর পরে মাজিদকে নিয়ে ওই চার জন মুম্বইয়ে যায় বিস্ফোরণের তিন মাস আগে। এক জন মাজিদেরই বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। সেই সময়ে রাজাবাজারের একটি সাইবার কাফে থেকে সে নিয়মিত ই-মেল চালাচালি করত বলে তদন্তে বেরোয়।

গোয়েন্দাদের দাবি, মাজিদের সঙ্গে মুম্বইয়ে যাওয়া ওই চার জনের এক জন আবার মুম্বইয়ে থেকে যায়। বাকি তিন জনকে নিয়ে ফেরে মাজিদ। ওই তিন জনও কলকাতায় থেকে যাওয়া যুবককে মাজিদই বেআইনি ভাবে বনগাঁ সীমান্ত পেরোতে সাহায্য করে। তাদের বক্তব্য ছিল, ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময়ে মাজিদের বাড়ি থেকে রেখে যাওয়া ট্রাভেল ব্যাগগুলো তারা আর নিয়ে যায়নি। তারা বলেছিল, ফের কিছু দিনের মধ্যে তারা আবার ফিরে আসবে। সেই মতো তারা আবার রাজাবাজারে মাজিদের বাড়িতে এসে সেগুলো নিয়ে মুম্বই চলে যায়। তার কিছু দিনের মধ্যেই ৭/১১-র হামলা।

মাজিদের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের সাহায্য করার, আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল মুম্বই পুলিশ। যদিও লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা এখনও মনে করি, ওই পাঁচ জন যে জঙ্গি, তা মাজিদ জানত না। নিজের অজান্তেই সে ওদের সাহায্য করেছিল। অথচ আইন তাকে রেহাই দেয়নি। ভাড়াটে রাখার সময়ে এটা মাথায় রাখা উচিত। তাই পুলিশকে আগেভাগে তথ্য দিলে সুবিধে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন