নির্বিকার: হেলমেট পরা থাকলেও এ ভাবেই স্ট্র্যাপ বাঁধেন না অনেকে। বৃহস্পতিবার, গড়িয়াহাটে। ছবি: সুমন বল্লভ
হেলমেট ব্যবহার নিয়ে লাগাতার প্রচার চলছে শহর জুড়ে। তাতে শহরের পথে মাথা ঢাকা দেওয়া মোটরবাইক-আরোহীর সংখ্যা সামান্য বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু হেলমেট যে পুলিশের ভয়ে নয়, নিজের নিরাপত্তার কারণেই পরা দরকার— সেই সচেতনতায় এখনও পিছিয়ে শহর কলকাতা। ফের যার প্রমাণ মিলল বৃহস্পতিবার কসবার একটি দুর্ঘটনায়। দীপক প্রসাদ (৫৪) নামে এক বাইক-আরোহীর মৃত্যুর পরে দেখা গেল, তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল শুধু নামেই। পুলিশ জানিয়েছে, হেলমেট মাথায় থাকলেও স্ট্র্যাপ লাগানো ছিল না। এ দিন একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায় দীপকবাবুর বাইক। তিনি পড়ে গেলে মাথা থেকে খুলে যায় দায়সারা ভাবে পরা হেলমেট। পুলিশ জানায়, তখনই বাসের চাকায় তাঁর মাথা থেঁতলে যায়।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে কসবা থেকে বালিগঞ্জের দিকে যাওয়ার সময়ে কসবার বকুলতলা মোড়ের কাছে ঘটে বিপত্তি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মোটরবাইকের গতি অনেকটাই বেশি ছিল। বকুলতলা মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ থাকায় সামনে থাকা নাগেরবাজার-আনন্দপুর রুটের বেসরকারি বাসটিকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। হঠাৎ বাসের সঙ্গে তাঁর মোটরবাইকের একটি অংশের ধাক্কা লেগে যায়। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন দীপকবাবু। ছিটকে পড়েন রাস্তায়। স্ট্র্যাপ বাঁধা না থাকায় খুলে যায় হেলমেট। সেই সময়েই বাসের পিছনের চাকা দীপকবাবুর মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। তাঁকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাসটি আটক করেছে কসবা থানার পুলিশ। তবে চালক পলাতক।
এ দিকে এই ঘটনার পরেই প্রশ্ন ওঠে দীপকবাবুর মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও এত বড় বিপদ ঘটে গেল কী ভাবে? কসবা থানার এক তদন্তকারী অফিসার জানান, রাস্তার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দুর্ঘটনার ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পড়ে যাওয়ার সময়েই দীপকবাবুর মাথার হেলমেট খুলে যাচ্ছে। তা থেকেই তদন্তকারীদের অনুমান, হেলমেট মাথায় দিয়ে রাখলেও স্ট্র্যাপ বাঁধেননি দীপকবাবু। ফলে সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়েই কাজে লাগেনি হেলমেটটি। দীপকবাবুর পরিবার এ দিন শোকে বিহ্বল। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তাঁর পরিজনেরা।
তবে এ দিনের ঘটনার কথা জানাজানি হতে নতুন করে চিন্তিত হয়ে পড়েছে লালবাজার। এ বার শুধু হেলমেট পরাই নয়, তা যথাযথ ভাবে পরার জন্য প্রচার চালানোর কথা ভাবছে পুলিশ। লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক কড়াকড়ি ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। কী করে বোঝা যাবে কোন বাইকচালকের মাথার হেলমেট বাঁধা আর কার বাঁধা নয়? এ জন্য চালকদেরই সচেতন হতে হবে।’’