Indian Medical Association

আইএমএ কলকাতার ভোটে নির্মল-শান্তনু নেই, ফাঁকা মাঠে গোল সুদীপ্তের!

গত বছর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরের রাজপথে বাগ্‌যুদ্ধ, এমনকি হাতাহাতিতে জড়াতে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসকদের। কী ভাবে ‘ডাক্তারবাবুরা’ রাস্তায় নেমে এমন কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৮
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

একটা সময়ে যাঁর বা যাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, তাঁরাই এখন ‘অস্তিত্বহীন’। বদলে শাসকদলেরই যে গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছে, তাদের একাংশ বলছে, ‘‘ও সব এখন অতীত!’’ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর কলকাতা শাখার নির্বাচনে এ বার এমন ছবিই ধরা পড়ল।

Advertisement

গত বছর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরের রাজপথে বাগ্‌যুদ্ধ, এমনকি হাতাহাতিতে জড়াতে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসকদের। কী ভাবে ‘ডাক্তারবাবুরা’ রাস্তায় নেমে এমন কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরে। সেখানেই এ বার শান্তিপূর্ণ ভোট! কারণ, বিগত আট বছরের সভাপতি, চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি এ বছর ভোটের লড়াইয়ে নেই। এমনকি, তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউও মনোনয়ন জমা দেননি বলে খবর। অন্য দিকে, স্বাস্থ্য শিবিরে এক সময়ে নির্মল-বিরোধী বলে পরিচিত এবং এখন আবার সুসম্পর্কে থাকা চিকিৎসক ও সাংসদ শান্তনু সেনের ঘনিষ্ঠ কোনও চিকিৎসকও এই নির্বাচনে মনোনয়ন দেননি। ফলে আইএমএ-র কলকাতা শাখার নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের ঘনিষ্ঠেরা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন।

শাসক-বিরোধী চিকিৎসক শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, নির্মল-শান্তনু জমানার বদলে এ বার কি তা হলে অতি পুরনো চিকিৎসক সংগঠনেও ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ফুল ফুটল? কারণ, সুদীপ্ত এখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওই বিশেষ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অতি ঘনিষ্ঠ বলেই সকলে জানেন। যদিও এ সব রটনা বলে দাবি করে তৃণমূলের ওই বর্ষীয়ান বিধায়ক-চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। তাই এটি সরকারপন্থী চিকিৎসকদের দখলে রয়েছে বলা উচিত। সেখানে অন্য মাত্রা যোগ করা অনুচিত।’’

Advertisement

গত বছর অবশ্য নির্মল ও সুদীপ্ত একজোট হয়ে এই নির্বাচনে লড়েছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন শান্তনু ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকেরা। দু’পক্ষের দেওয়া প্যানেলের মধ্যে হয়েছিল লড়াই। ভোটে জিততে মরিয়া ছিল দু’পক্ষই। দেখা গিয়েছিল, ভোট কেন্দ্রের সামনে রাস্তার দু’পাশে দু’পক্ষই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। ভুয়ো ভোটার, কারচুপির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সেই তর্কাতর্কি এক সময়ে মারামারিতে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেছিলেন নির্মল-সুদীপ্তের প্যানেলের চিকিৎসকেরা। কয়েকটি আসন অবশ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল শান্তনু শিবির।

কিন্তু এর কয়েক মাস পরে আচমকাই স্বাস্থ্য-রাজনীতিতে পট পরিবর্তন। দেখা গেল, চির বিবদমান নির্মল-শান্তনু জোটবদ্ধ। আর অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রভাবে রাজ্যের একের পর এক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে শীর্ষে থাকছেন সুদীপ্ত। সূত্রের খবর, আইএমএ-র কলকাতা শাখার নির্বাচনে গত বারের মতো এ বারেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে ঝামেলায় জড়িয়ে নিজেদের নাম খারাপ করতে রাজি হননি শান্তনু ঘনিষ্ঠ কোনও চিকিৎসক। এমনকি, শান্তনু নিজেও কোনও ঝুট-ঝামেলায় জড়াতে নারাজ। শাসক দলের চিকিৎসকদেরই একাংশের দাবি, ‘‘শান্তনু গোষ্ঠীর সমর্থন না পেয়ে অগত্যা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন নির্মল।’’

যদিও নির্মলের দাবি, ‘‘গোষ্ঠীর ব্যাপার নেই। নতুনদেরও তো সুযোগ দিতে হবে, তাই সরে এসেছি। যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, সকলেই ঘনিষ্ঠ। আমার সমর্থন নিয়েই তাঁরা মনোনয়ন দিয়েছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে সব বৈঠকেই ওঁরা আমাকে ডাকবেন, আমিও থাকব।’’ যদিও সুদীপ্ত ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে সমর্থন মিলবে না জেনেই আর ভোট-লড়াইয়ে শামিল হননি নির্মল-শান্তনু জুটি।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী সহ-সভাপতি, চিকিৎসক কৌশিক বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারপন্থী চিকিৎসকেরা মেডিক্যাল কাউন্সিলে যেমন জিতেছেন, তেমনই আইএমএ-কলকাতা শাখাতেও ক্ষমতায় এলেন। এ বার আমাদের লক্ষ্য, নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই আইএমএ-র রাজ্য শাখাতেও পরিবর্তনের।’’ যদিও আইএমএ-রাজ্য শাখায় এখন সরকারপন্থী চিকিৎসকেরাই রয়েছেন। ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শান্তনু অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্যে রাজি হননি।

আগামী ৫ মার্চ ছিল আইএমএ-কলকাতা শাখার নির্বাচন। কিন্তু অন্যেরা মনোনয়ন না দেওয়ায় শনিবার ৯ জনের কর্মসমিতি ও ২৫ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের তালিকা প্রকাশ হয়। সভাপতি হয়েছেন শর্বরী দত্ত, সম্পাদক সুদীপ্তের কন্যা শিল্পা বসুরায়, তিন জন সহ-সভাপতির এক জন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন