শহর ঘুরে দেখা যায়নি ধর্মঘটের চেনা ছবি

সাধারণ ধর্মঘটের কোনও প্রভাবই কার্যত পড়ল না শহরের জনজীবনে। হাজিরার সংখ্যা কিছু কম থাকলেও শুক্রবার শহরের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি খোলাই ছিল। দোকানপাট কিছু কিছু বন্ধ থাকলেও খোলা দোকান-বাজারের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। শহরে কয়েকটি জায়গায় ধর্মঘট সমর্থকদের মিছিল, জমায়েত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share:

একটু বেলার দিকে কিছুটা ফাঁকা ডালহৌসি চত্বর।

সাধারণ ধর্মঘটের কোনও প্রভাবই কার্যত পড়ল না শহরের জনজীবনে। হাজিরার সংখ্যা কিছু কম থাকলেও শুক্রবার শহরের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি খোলাই ছিল। দোকানপাট কিছু কিছু বন্ধ থাকলেও খোলা দোকান-বাজারের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। শহরে কয়েকটি জায়গায় ধর্মঘট সমর্থকদের মিছিল, জমায়েত হয়েছে। তবে বিক্ষোভ-অবস্থান কার্যত হয়নি। বাস, অটো, ট্যাক্সি চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই ছিল। যাত্রীর সংখ্যা অবশ্য অন্য দিনের তুলনায় কিছু কম ছিল।

Advertisement

কার্যত স্বাভাবিক ছিল হাওড়াও। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও বন্‌ধের প্রভাব প্রায় দেখা যায়নি। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সবই খোলা ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি তালুক সেক্টর ফাইভ-ও ছিল প্রায় স্বাভাবিক। টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়া ছিল স্বাভাবিক। ধর্মঘটের কোনও প্রভাব ছিল না। অন্যান্য দিনের মতোই এ দিনও সেখানে কাজ হয়েছে।

সকালের দিকে শ্যামবাজার মোড়, হাজরা ও রাসবিহারীতে সিপিএমের মিছিল বেরোয়। মিছিলের ফলে হাজরায় কিছুক্ষণ যানজট হয়। তবে পুলিশের তৎপরতায় তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মৌলালি মোড়েও ধর্মঘটের সমর্থনে জমায়েত করেন সিটু-র সমর্থকেরা। তার জেরেই বেশ কিছুক্ষণ যানজটে নাজেহাল হন অফিসযাত্রীরা। এইট বি বাস স্ট্যান্ড থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত ধর্মঘটীরা মিছিল করেন। মিছিলকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা হয়।

Advertisement

অন্য দিকে, বেহালা থানার সামনে সিটু সমর্থকেরা জড়ো হলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিতে যায়। তখনই পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে ধর্মঘটীদের। তার পরে তা ধস্তাধস্তিতে পৌঁছয়। এই ঘটনায় এক মহিলা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পরে থানার সামনে থেকে ধৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে মিছিল শুরু হয়। মিছিলের জেরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই একই সময়ে বন্‌ধের বিরোধিতা করে কাউন্সিলর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীদের একটি মিছিল বার হয়। দুই মিছিল মুখোমুখি হতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেটের পরিস্থিতি এ দিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ লেক মার্কেটে সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তী ও অন্যান্য সিপিএম নেতার নেতৃত্বে জমায়েত হয়। সেখানে পথসভা হওয়ার কথা ছিল। সেই একই জায়গায় এ দিন তৃণমূলের ধর্মঘটের বিরুদ্ধে পথসভা হয়। শুরু হয় বচসা ও হাতাহাতি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ দুই মিছিলের মাঝে ব্যারিকেড দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। শ্যামল চক্রবর্তীর পথসভা বাতিল করা হয়। সিটুর মিছিল লেক মার্কেটের ভিতরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় ও সমর্থকের মিছিল ঘুরে যায় হাজরা মোড়ের দিকে। এই ঘটনার জেরে যানজট দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অফিসযাত্রীদের আটকে থাকতে হয়। গড়িয়া আতাবাগান মোড়ে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় বন্‌ধের আগের রাতে ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ এলাকার নেতা কর্মীদের।

বিকেলে ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট এলাকা। — শুভাশিস ভট্টাচার্য ও সুমন বল্লভ

শহরের যে কয়েকটি জায়গায় ধর্মঘটের প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া। হিন্দু স্কুল ও হেয়ার স্কুলের শিক্ষকদের উপস্থিতি থাকলেও বেশির ভাগ ছাত্র অনুপস্থিতি ছিল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ুয়ারা অধিকাংশ অনুপস্থিত ছিলেন। স্কুল-কলেজ ছাড়াও বইপাড়া এ দিন কার্যত অচল ছিল। এ দিন সকাল থেকে অধিকাংশ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ ছিল।

দক্ষিণ শহরতলির সোনারপুর-হরিনাভির একটি স্কুলে এ দিনের ষান্মাসিক পরীক্ষা বাতিল হওয়া নিয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় একদল পড়ুয়া। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিলের কথা আগে জানায়নি। তবে স্কুলের তরফে দাবি করা হয়েছে, আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছিল।

পার্ক সার্কাস এলাকার বাস-অটোতে যাত্রীর সংখ্যা দিল কম। উল্টোডাঙার ছবিটাও কিছুটা আলাদা ছিল। এ দিন ভিড় ও যানজট চোখে পড়েনি। বাসযাত্রীর সংখ্যাও যথেষ্ট কম ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায়।

রাস্তায় এ দিন বহু সরকারি বাসের দেখা মেলে। বাগবাজারে বহু বাসচালক হেলমেট পড়ে বাস চালিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বাসই ছিল ফাঁকা। চালকেরা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই বাস চালাতে হচ্ছে। অন্যান্য দিন পনেরো মিনিট অন্তর যে রুটে বাস চলে, এ দিন দশ মিনিট অন্তর বাস চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন