ঐশী পাল। —নিজস্ব চিত্র।
জ্বরে ফের মৃত্যু হল দক্ষিণ দমদমে। এ বার পাঁচ বছরের এক শিশু। এ নিয়ে এই মরসুমে জ্বরে দু’জন শিশু, দু’জন অন্তঃসত্ত্বা-সহ মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ওই পুর এলাকায়। যদিও দক্ষিণ দমদম পুরসভা এই তথ্য মানতে নারাজ।
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় ঐশী পাল নামে শিশুটির। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এপিসি সরণিতে তার বাড়ি। স্থানীয়দের দাবি, ক’দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী। গত শনিবার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিশুটিকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঐশীর স্কুলের আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার এই দুই মৃত্যুর প্রতিবাদে অভিভাবকেরা কিছুক্ষণের জন্য দমদম রোড অবরোধ করেন। পুরকর্তাদের দাবি, তাঁরা খবর পেয়েছেন, শিশুটির আগেও জ্বর হয়েছিল। সুস্থ হওয়ার পরে ফের জ্বরে হয়। তাঁরা জানান, খবর যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে মশাবাহিত রোগ বিশেষত ডেঙ্গির প্রকোপে এই পুর এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রাণ গিয়েছে। পুরসভার দাবি, মৃত্যু বা জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোর নীচে। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। বাকি মৃত্যু অন্য কারণে বলে দাবি পুরসভার।
আরও পড়ুন: দূর থেকে নিম্নচাপের কেরামতি, বৃষ্টি আজও
যদিও তথ্য বলছে, পুরসভার ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা দুই-ই বেশি। সব থেকে খারাপ অবস্থা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধুগড় এলাকার। গত রবিবার আট নম্বর ওয়ার্ডের আর এন গুহ রোডে জ্বরে মৃত্যু হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে এক মহিলা প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে জন্ডিস হয়। শেষে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে, দক্ষিণ দমদমের ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১, ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও।
এ বছর লক্ষাধিক টাকা খরচ করে মশাবাহিত রোগ নিয়ে প্রচারে ঢেউ তুলেছে দক্ষিণ দমদম। তবে কেন ফল মেলেনি? বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে যতটা কাজ করা দরকার তা হয়নি। যদিও দক্ষিণ দমদম পুরসভার পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভা। আবার পুরকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, আবেদন সত্ত্বেও জমা জল সরাচ্ছেন না অনেকে। পুরকর্মীরা জমা জল ফেলে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ফের জল জমাচ্ছেন ওই বাসিন্দারাই। বাসিন্দাদের দাবি, পরিকল্পনা ছাড়াই দমদম জুড়ে প্রোমোটিং-এর রমরমা চলছে। বহুতলের নিকাশির জল কোথায় গিয়ে পড়ছে কেউ জানেন না। সেই জল জমেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বাসিন্দারা সচেতন না হলেও পুরসভা কেন কড়া পদক্ষেপ করছে না? পুর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ক’বছর আগে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে।’’ চেয়ারম্যানের দাবি, সচেতনতা পর্যাপ্ত নয় ঠিকই। তবে কড়া পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। নোটিসও পাঠানো হচ্ছে।