Fire Crackers

যেন বিশৃঙ্খলারই পুনরাবৃত্তি, বাজির খেলা বিসর্জনেও 

রাতের দিকে বিশ্বকাপে ভারতের খেলার শেষে অনবরত বাজির বিকট তাণ্ডব শুরু হয়। যা চলতে থাকে অনেক রাত পর্যন্ত। সমালোচনার পরেও কি তবে পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ ফিরছে না?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৫
Share:

কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ফাটানো হচ্ছে নিষিদ্ধ চকলেট বোমা। বুধবার, ভবানীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

এ যেন সব কিছুরই পুনরাবৃত্তি চলছে। কালীপুজো এবং তার পরের দিনও যে ভাবে নিষিদ্ধ বাজি ফাটিয়ে, তারস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স সহযোগে শহর জুড়ে শব্দ-তাণ্ডব চলছে, গত দু’দিনের বিসর্জনেও তার অন্যথা হয়নি। অভিযোগ, একই ভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। বরং বিসর্জনে বিধিভঙ্গের বিষয়গুলি কোথাও কোথাও পুজো এবং তার পরের দিনের অবস্থাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি, রাতের দিকে বিশ্বকাপে ভারতের খেলার শেষে অনবরত বাজির বিকট তাণ্ডব শুরু হয়। যা চলতে থাকে অনেক রাত পর্যন্ত। সমালোচনার পরেও কি তবে পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ ফিরছে না? ছটপুজোতেও কি দেখা যাবে বিধিভঙ্গের ছবিই?

Advertisement

এ সবের উত্তর দিতে চাননি কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল। যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার দাবি করেছেন, ‘‘কড়া হাতেই সবটা সামলানো হয়েছে।’’

বাস্তবে অবশ্য অন্য চিত্রই চোখে পড়ছে শহরের রাস্তায়। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ বাড়ির কালীপ্রতিমা বিসর্জন হয়েছে শহরের বিভিন্ন ঘাটে। বিকেলের পর থেকেই শুরু হয় কিছু বারোয়ারি পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা। যার জেরে রাস্তা বন্ধ করার পরিস্থিতি হয়। বুধবার ছিল বিসর্জনের শেষ দিন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কিছু জায়গায় এ দিনের অবস্থা মঙ্গলবারের থেকেও খারাপ হয়।

Advertisement

বিকেলের পর সবচেয়ে বেশি দমবন্ধ পরিস্থিতি হয় মানিকতলা, বিডন স্ট্রিট এবং অরবিন্দ সরণিতে। রবীন্দ্র সরণি, উল্টোডাঙা, গ্রে-স্ট্রিট, গিরিশ পার্ক চত্বরেও সন্ধ্যায় যানজট ছিল নজরে পড়ার মতো। গাড়ির চাপ ছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে। তার মধ্যেই বিবেকানন্দ রোডে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা পর পর এগিয়ে চলেছে বিসর্জনের জন্য। সিগন্যাল লাল রেখে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে হয় পুলিশকে। সেই শোভাযাত্রার মধ্যে ঢাকের আওয়াজকেও ছাপিয়ে গিয়েছে অন্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ। ছেলের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ডিজে-বক্স নিয়ে এত কথা হয়। কিন্তু এই বাজনার আওয়াজই বা কম কী? এর তীব্রতা তো ডিজের আওয়াজকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।’’

দেখা গেল, শোভাযাত্রার ভিড় ঠেলে নাচতে নাচতে এগোচ্ছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। তাঁদেরই এক জন নাচতে নাচতে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন। তাঁকে ঘিরে নেচে চলেছেন আরও দশ-বারো জন। এমন উন্মাদনা ঘিরেই থমকে গেল পর পর প্রতিমা। শোভাযাত্রার মধ্যে থেকে আবার দু’জনকে দেখা গেল, মাঝ রাস্তায় তুবড়ি রেখে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন! আবার কেউ পকেট থেকে বাজি বার করে তাতে আগুন ধরিয়েই ছুড়ে দিলেন! আওয়াজে কেঁপে উঠল আশপাশ। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আটকালেন না? তাঁর উত্তর, ‘‘আটকানো সম্ভব হলে গত দু’দিনে এত বাজি ফাটত? উপর মহলের নির্দেশ মতো বুঝিয়ে যতটা সম্ভব আটকাচ্ছি।’’

তেমন ভাবেই কার্যোদ্ধারের নজির দেখা গেল নিমতলা এবং বাবুঘাটের কাছেও। সেখানে আবার রেললাইনের দু’ধারে বাজি রেখে তাতে আগুন দিতে দেখা গেল। আর পুলিশ শুধুমাত্র ঘাটের বেশি কাছে লোক এগোতে না দেওয়ার কর্তব্যই পালন করে গেল।

ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফাটাকেষ্টের কালীপুজোর কর্তা সুকৃতী দত্তের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘‘কিছু পুজোর জন্য খুব খারাপ নজির তৈরি হচ্ছে। কোনও বাজি নিয়ে বিসর্জনে না যাওয়ার নির্দেশ আমরা পুজোর সদস্যদের উদ্দেশ্যে জারি করেছিলাম। যাতে অন্যের বিশৃঙ্খলার চাপ আমাদের উপরে না পড়ে। ফলে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’ আমহার্স্ট স্ট্রিটের আরও এক পুজোর কর্তা তথা তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘বাজি নিয়ে বিসর্জনে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। সাউন্ড বক্সের আনন্দ যে আদতে নিরানন্দ, সেটাও বোঝা দরকার। আমরা ঢাক বাজিয়েই শোভাযাত্রা করেছি।’’ অন্য একটি পুজোর উদ্যোক্তা সৌম্য বক্সী বলেন, ‘‘পুজোর চেয়েও বড় ব্যাপার বিসর্জন। সুষ্ঠু ভাবে সবটা যাতে হয়, তাই সবার আগে ছেলেদের বাজি দূরে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তবুও কতটা সামলাতে পেরেছি জানি না।’’

যেমন জানে না পুলিশও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন