ফের বিকট শব্দ উড়ালপুলে, ফিরল বিপর্যয়ের আতঙ্ক

জোরে একটা আওয়াজ পেলেই হল। সঙ্গে সঙ্গে বুক কেঁপে ওঠে কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোডের বাসিন্দাদের। আবার কি কোনও বিপর্যয়?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

জোরে একটা আওয়াজ পেলেই হল। সঙ্গে সঙ্গে বুক কেঁপে ওঠে কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোডের বাসিন্দাদের। আবার কি কোনও বিপর্যয়?

Advertisement

রবিবার সকালেও ফের সে রকমই একটা আওয়াজ। কানে আসতেই আশপাশের বাড়ি থেকে যে যার মতো দুদ্দাড় করে ছুট। উড়ালপুলের কাছে পৌঁছে দেখলেন, একটি স্তম্ভ নিজে থেকে কিছুটা ঝুঁকে পড়াতেই ওই শব্দ। আতঙ্ক এতটাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে এখনও। ঘুরেফিরে আসছে সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি।

পোস্তায় বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভেঙে যাওয়া অংশ সরানোর কাজ চলছে গত কয়েক দিন ধরে। শনিবার রাতভর ভেঙে পড়া একটি স্তম্ভের উপর থেকে কংক্রিটের চাঁই সরানোর কাজ চলছিল। রবিবার সকাল পৌনে আটটা নাগাদ হঠাৎই ওই স্তম্ভটি ঝুঁকে পড়ে ১ নম্বর কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোডের একটি বাড়ির উপরে। তাতেই ওই বিকট শব্দ।

Advertisement

ওই সময়ে ১ নম্বর বাড়ির নীচে ফুটপাথে মন্দিরে পুজো চলছিল। যে দিন উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ে, সে দিন এই মন্দিরটিরই আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। দুর্ঘটনার পরে পুলিশের তরফ থেকে সাবধান করা হয়, মন্দিরে যেন আর কেউ না আসেন। কারণ, যে কোনও সময়ে উড়ালপুলের বাকি অংশ ওই মন্দিরে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই বাড়ির বাসিন্দাদেরও সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে কেউ কান দেননি, এ দিন সকালেই তার প্রমাণ মিলেছে। বাড়িতে যেমন বাসিন্দারা ছিলেন, তেমনই মন্দিরে পুজোও চলছিল।

এ দিনের ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা মন্দির ও বাড়ি থেকে লোকেদের সরিয়ে নেন। আশপাশে উপস্থিত লোকজনকেও দ্রুত বিপজ্জনক স্থান থেকে বার করে আনা হয়। রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশ সরানোর দায়িত্ব পেয়েছে। সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘জায়গাটা একদমই নিরাপদ নয়। আমরা বারবার কেএমডিএ-কে বলছি আশপাশের বাড়িতে যেন কেউ না থাকেন।’’

৩১ মার্চ উড়ালপুলের নির্মীয়মাণ অংশ ভেঙে পড়েছিল কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোডে। পরদিনই অর্থাৎ ১ এপ্রিল কলকাতা পুরসভা রাস্তার দু’পাশের বাড়ি খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও বাসিন্দারা বাড়িতেই কেন?

এলাকাবাসীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমরা কোথায় যাব?’’ স্থানীয় বাসিন্দা আদিত্য গোস্বামীর কথায়, ‘‘কত দিন নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে, সে ব্যাপারে কেউ কিছু
বলতে পারছে না। পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব?’’

পুরসভার দাবি, তাদের কমিউনিটি হলে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং সেখানে নাকি ওই এলাকার অন্যান্য বাড়ির বাসিন্দারাও ছিলেন। বেশ কিছু বাসিন্দার দাবি, পুরসভার তরফ থেকে যে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা বাসযোগ্য নয়। ওখানে পরিবার নিয়ে থাকা যায় না। পুরসভাকে অনুরোধ করেও অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়নি।

এলাকার মানুষ চাইছেন, ওই এলাকা থেকে উড়ালপুল পাকাপাকি ভাবে সরিয়ে ফেলা হোক। তাঁদের দাবি, এক বার চোখের সামনে উড়ালপুল ভেঙে যে দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা, তার পরে তাঁদের আর কারও উপরে কোনও বিশ্বাস নেই। দ্বিতীয়বার যে উড়ালপুল ভাঙবে না, এমন কথাও জোর দিয়ে তাঁদের কেউ এসে বলছেন না। বললেও তাঁরা শুনতে রাজি নন।

গত রবিবারের মতো এ দিনও তাই স্থানীয় বাসিন্দারা উড়ালপুল ভেঙে ফেলার দাবিতে মিছিল করেন। ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’র তরফে রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ মিছিল শুরু হয়। মালাপাড়া মোড়, জোড়াবাগান, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট, টেগোর ক্যাসেল স্ট্রিট, নতুনবাজার হয়ে গণেশ টকিজে এসে মিছিল শেষ হয় ১টা নাগাদ। টেগোর ক্যাসেল স্ট্রিটে যখন মিছিল পৌঁছয়, তখন সেখানে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন তৃণমূলপ্রার্থী শশী পাঁজা। তাঁর সামনেই এলাকা থেকে উড়ালপুল পুরোপুরি সরিয়ে ফেলার দাবিতে বিক্ষোভও দেখান মিছিলকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন