‘যুঝতে শেখানো মায়েরই দায়িত্ব’

আমার কাছে এই লড়াইটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হচ্ছে কারণ, মেয়েদের যৌন নিগ্রহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের তরফে চেপে যাওয়ার চেষ্টা হয়।

Advertisement

স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (নাট্য পরিচালক)

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

মায়েদের লড়াইটা সব সময়েই আলাদা। কোনও মা অভাবের সংসারে নানা চেষ্টাচরিত্র করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার লড়াই করেন। আবার কেউ সন্তানের উপরে ঘটা নিগ্রহের প্রতিকার চেয়ে বছরের পর বছর ধৈর্য্য ধরে লড়ে যান। ঠিক যেমন এ ক্ষেত্রে ঘটেছে।

Advertisement

আমার কাছে এই লড়াইটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হচ্ছে কারণ, মেয়েদের যৌন নিগ্রহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের তরফে চেপে যাওয়ার চেষ্টা হয়। বহু সময়ে মায়েরাই মেয়েদের মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এ ক্ষেত্রে কিন্তু ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। মা লড়ে গিয়েছেন। হাল ছাড়েননি।

নিজের কাজ এবং ব্যক্তিগত পরিসরে সফল এক তরুণীর মা হিসেবে বলতেই পারি, মায়ের কাজ তো শুধু সন্তানের মুখের সামনে খাবার ধরা আর লিখতে-পড়তে শেখানো নয়। মাকে ছাড়া, স্বতন্ত্র ভাবে বাঁচতেও তো শেখাবেন মা-ই। নিজের অনুভূতি দিয়ে, সন্তানকে তার অন্তরের শক্তিটা অনুভব করার পথও তো দেখাবেন তিনিই। এই মা, যিনি চোদ্দো বছর ধরে মেয়ের জন্য লড়াই চালালেন, তিনি সেই কাজটাই করলেন। হয়তো তাঁকেও সাংসারিক অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে এই দৌড়োদৌড়িতে। কিন্তু তাঁর মেয়ে যে জোরটা নিয়ে বড় হয়েছে, তা তাকে ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

Advertisement

ছোটবেলায় যখন মেয়েকে একা বাড়িতে ছেড়ে রেখে আমাকে চলে যেতে হত, খুব চিন্তা হত। যে বয়সে শিশুদের হাত ধরে বাবা-মায়েরা আঁকার ক্লাস, নাচের ক্লাসে নিয়ে যান, আমার মেয়েকে তখন একাই যেতে হয়েছে। আমরা ওকে বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তার যে ভাল দিক কত, তা জানা গেল মেয়ে বড় হওয়ার পরে। কত কী যে এখন শিখি ওর থেকে! সারাক্ষণ আগলে রাখলে ওর হয়তো সেই অভিজ্ঞতাগুলোই হত না। ফলে আমাদেরও সে সব শিক্ষা ও দিতে পারত না।

অভিভাবকের কাজই হল সন্তানকে চারপাশের ভাল-মন্দটা চিনে নিয়ে চলতে শেখানো। তার সমস্ত কাজ, সিদ্ধান্ত নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তাকে ভিতু বানিয়ে দেওয়া কখনওই কাজের কথা নয়। নিজে লড়াই করব এবং সন্তানকে লড়তে শেখাব— এই ভাবনার কোনও বিকল্প নেই এখনও। আশা করব, এই মায়ের লড়াই আরও বহু মাকে লড়তে শেখাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন