Murder

নথি-চক্রে পিছোল মুক্তি, ১৯ বছর পরে জামিন বৃদ্ধের

একটি মামলার নথি খুঁজে না পাওয়ায় গত ১৯ বছর ধরে তাঁকে আদালতেই তোলা যায়নি!

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক বৃদ্ধকে এক মাস আগেই মুক্তি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে মুক্তি মিলছিল না গার্ডেনরিচের বাসিন্দা, ৭৩ বছরের ধর্মনাথ মাহাতোর। কারণ, অস্ত্র আইনে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আর একটি মামলার নথি খুঁজে না পাওয়ায় গত ১৯ বছর ধরে তাঁকে আদালতেই তোলা যায়নি! অবশেষে মঙ্গলবার আলিপুর চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা আদালত সেই মামলাতেও জামিন দিয়েছে ওই বৃদ্ধকে।

Advertisement

ধর্মনাথের আইনজীবী সরফরাজ হোসেন বলেন, ‘‘একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৯৯-এ অস্ত্র আইনের ২৫ ও ২৭ নম্বর ধারায় ধর্মনাথকে গ্রেফতার করেছিল গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ। ২০০৩-র ১৯ জুলাই তাঁকে শেষ বার আদালতে তোলা হয়।’’ তিনি জানান, ধর্মনাথের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা আগে থেকেই চলছিল। জেলে থাকাকালীন ওই মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন হয় তাঁর। সরফরাজের দাবি, ‘‘গত মাসে রাজ্য সরকার তাঁকে মুক্তি দিলেও ধর্মনাথ বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না। কারণ, অস্ত্র আইনে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাটির নথি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ১৯ বছর ধরে ওই মামলায় আদালতে তোলা যায়নি তাঁকে।’’

মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে ধর্মনাথের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। সব বিষয় খতিয়ে দেখে বিচারক ধর্মনাথকে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন। পাশাপাশি, সময় নষ্ট না করে (অস্ত্র আইনে রুজু) ওই মামলার আসল নথি আদালতে পেশ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বেঞ্চ ক্লার্ককে। মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেন বিচারক। মঙ্গলবার রাতেই বাড়ি ফিরেছেন ধর্মনাথ। অস্ত্র আইনের ২৫ এবং ২৭ নম্বর ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন তিন থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে সেই মামলায় আগেই জামিন পাওয়া থাকলে এক মাস আগেই ধর্মনাথ বাড়ি ফিরতে পারতেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী।

Advertisement

সূত্রের খবর, সম্প্রতি বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব শুভ্রকান্তি ধর। তাঁর সঙ্গে দেখা করে ধর্মনাথ তাঁর বন্দিদশার কথা জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মামলার নথি মিলছে না। শুভ্রকান্তিবাবু বলেন, ‘‘আমার কাছে এসে ওই ব্যক্তি জানান, তাঁকে ১৯ বছর ধরে আদালতেই তোলা হয়নি।’’ এর পরেই জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ ধর্মনাথের হয়ে আইনজীবী নিয়োগ করেন। শুরু হয় তাঁকে আদালতে হাজির করানোর প্রক্রিয়া।

সরকার মুক্তি দেওয়ার পরেও কেন তাঁর বাবাকে আরও বেশিদিন জেলে থাকতে হল— সেই প্রশ্ন এখান আর তুলতে চান না ধর্মনাথের ছেলে সাহেব। তাঁর কথায়, ‘‘বাবাকে ফিরে পেয়েছি, এটাই শেষ কথা। কাউকে দোষ দিতে চাই না।’’

তবে এ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে আইনজীবী মহলে। আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘যাঁদের গাফিলতির কারণে ওই বৃদ্ধকে অতিরিক্ত সময় জেলে থাকতে হল, তাঁদের চিহ্নিত করে সাজা দেওয়া দরকার।’’ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘সংশোধনাগারে এমন অনেক বন্দি রয়েছেন, যাঁদের ঠিক সময়ে আদালতে হাজির করানো হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন