ঠেক হটিয়ে মাজার বাঁচালেন অ-মুসলিম কর্ণধার

২০ বছর বয়সে মুঙ্গের থেকে কলকাতায় পা রাখাই জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। ট্যাক্সিচালক হিসেবে জীবন শুরু করে তিনি এখন সমাজসেবী। তা অবশ্য কিরণকুমার গুপ্তের প্রধান পরিচয় নয়। তিনি এ রাজ্যের একমাত্র অ-মুসলিম, যিনি ভবানীপুরের একটি পীরের মাজারে কর্ণধার।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

শিক্ষক: কম্পিউটার শেখাচ্ছেন কিরণকুমার গুপ্ত। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

২০ বছর বয়সে মুঙ্গের থেকে কলকাতায় পা রাখাই জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। ট্যাক্সিচালক হিসেবে জীবন শুরু করে তিনি এখন সমাজসেবী। তা অবশ্য কিরণকুমার গুপ্তের প্রধান পরিচয় নয়। তিনি এ রাজ্যের একমাত্র অ-মুসলিম, যিনি ভবানীপুরের একটি পীরের মাজারে কর্ণধার।

Advertisement

এ রাজ্যে সরকারি নথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার। যার মধ্যে কলকাতায় ১২০০। ভবানীপুরের ওই ওয়াকফ সম্পত্তির নাম সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহ ওয়াকফ এস্টেট। রাজ্যের একটি ওয়াকফ সম্পত্তির মোতায়াল্লি এক জন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় খুশি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আবদুল গনি। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন ভিন্ন ধর্মের মানুষ মোতায়াল্লি হয়ে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছেন। যখন ধর্মীয় ভেদাভেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন কিরণবাবুর মতো মানুষ প্রয়োজন।’’

পীরের কবরস্থানের উপরে কিরণবাবুর ভক্তি বরাবরের। মুঙ্গের থেকে ভবানীপুরে এসেই তাঁর চোখে পড়েছিল যোগেশ মিত্র রোডে প্রায় ৫০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে একটি মাজার। ওয়াকফ বোর্ডের সহ-আধিকারিক খলিলুর রহমানের কথায়, ‘‘৫০ বছর আগে মাজারটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছিল। ওই তল্লাট মদের ঠেকে পরিণত হয়েছিল। অনেক অত্যাচার সহ্য করে কিরণবাবু নিজের উদ্যোগে সেটি ওয়াকফ বোর্ডে এসে নথিভুক্তির ব্যবস্থা করেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: তিন বছরের মেয়ের প্রচুর খরচ, মেরেই দিল বাবা

ছয়ের দশকে ট্যাক্সি চালালেও দু’বেলা পেটভরে খাবার জুটত না কিরণবাবুর। ভবানীপুরে আত্মীয়ের বাড়ির পাশেই ছিল সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহের কবরস্থান। রোজ সেখানে প্রার্থনা করতেন তিনি। কিরণবাবুর কথায়, ‘‘লক্ষ্য ছিল, মদের ঠেক থেকে সেটির খোলনলচে বদল করা।’’

আগে মাজারটি ছিল মাটির। উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি। এখন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। পাশেই সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিচালিত কম্পিউটার সেন্টার। সেখানে পথশিশুদের বিনা পয়সায় কম্পিউটার শেখানো হয়। দুঃস্থ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছতে রয়েছে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘একটি ধর্মীয় স্থানকে কী ভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের কাজে লাগানো যায়, তা কিরণবাবুর থেকে মুসলিম মোতায়াল্লিদের শেখা উচিত।’’

কিরণবাবুর সমাজসেবা সোনারপুর বা বীরভূমের নলহাটি ছড়িয়ে পড়েছে। দু’জায়গাতেই দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য গড়া হয়েছে স্কুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন