Bank Cheque

চেকে জালিয়াতি করে টাকা লোপাটে অভিযুক্ত শুশ্রূষাকর্মী

বিষয়টি নজরে আসতেই ব্রিটেন থেকে শেক্সপিয়র সরণি থানায় মেল করেছেন সেই চিকিৎসক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩৪
Share:

—প্রতীকী ছবি

স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক ছেলে ব্রিটেনে থাকেন। কলকাতায় বৃদ্ধা মায়ের দেখভালের জন্য মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে এক জনকে রেখেছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কের চেক বই থেকে জরুরি সব নথিপত্র থাকত ওই শুশ্রূষাকর্মীর কাছেই। অভিযোগ, বৃদ্ধার মৃত্যুর পরেও টানা এক বছর সেই চেক বইয়ে ইংরেজিতে লেখা ১৫ সংখ্যাটির অদলবদল করে এবং পাশে কথায় লিখে প্রতি মাসে ৪৫ হাজার টাকা করে বেতন তুলেছেন ওই ব্যক্তি। আমপানে বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে তুলে নিয়েছেন এককালীন ৩০ লক্ষ টাকাও!

Advertisement

বিষয়টি নজরে আসতেই ব্রিটেন থেকে শেক্সপিয়র সরণি থানায় মেল করেছেন সেই চিকিৎসক। অভিযোগ দায়ের হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের যে শাখায় ওই অ্যাকাউন্ট, সেখানেও। বছর ষাটেকের ওই চিকিৎসকের নাম সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তকে ধরা হয়নি। অভিযুক্ত গৌতম দাসের দাবি, “ওই চিকিৎসক নিজেই আমাকে ওই টাকা দিয়েছিলেন। প্রতারণার ব্যাপারই নেই।”

সৌমিত্রবাবুর দাবি, বছর দুয়েক আগে তাঁর স্ট্রোক হয়। যার জেরে তাঁর শরীরের ডান দিকের অংশ কর্মক্ষমতা হারায়। বর্তমানে তাঁর চলাফেরায় সমস্যা রয়েছে। লাগাতার চিকিৎসায় বাঁ হাতে কাজ চালানোর মতো সই করতে শিখেছেন তিনি। প্রতি বছর পার্ক স্ট্রিটের ভাড়াবাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন তিনি। ২০০৭ সালে মায়ের জন্য গৌতমকে নিযুক্ত করেন তিনি।

Advertisement

সৌমিত্রবাবুর দাবি, ২০১৪ সালে মায়ের মৃত্যুর পরেও গৌতমকে কাজে রেখেছিলেন তিনি। এ দেশে তাঁর কিছু জমির দেখাশোনা এবং ব্যাঙ্কের কাজ করার জন্য। লকডাউনের ঠিক আগে গত ১৭ মার্চ তিনি এ দেশে এসেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় কলকাতায় আসতে পারেননি। বেঙ্গালুরুতে নিজেদের একটি বাড়ি বিক্রি করেই তাঁকে ব্রিটেনে ফিরে যেতে হয়। গত অগস্টে তিনি প্রতারণার বিষয়টি টের পান।

সৌমিত্রবাবু বলেন, “চেক বইয়ের বেশ কয়েকটি পাতায় সই করে রেখে গিয়েছিলাম। তাতে সংখ্যায় ১৫ হাজার লেখা ছিল। শুধু কথায় ১৫ হাজার লিখে জমা করলেই গৌতম ওঁর বেতন পেয়ে যেতেন। কিন্তু গত এপ্রিলে ব্রিটেনে ফিরে দেখি, গৌতম আর সে ভাবে যোগাযোগ রাখছেন না। ১৮ জুন মেসেজ করতে বললেন, আমপানে ওঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ লক্ষ টাকা তুলেছেন।” সৌমিত্রবাবুর মন্তব্য, “কথাটা শুনেই আকাশ থেকে পড়ি! আমার সই ছাড়া কী করে কেউ এত টাকা তুলতে পারেন! আমার স্ত্রীকে বিষয়টি বলতেই তিনি ৩ অগস্ট ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ইমেল পাঠিয়ে অভিযোগ জানান। ব্যাঙ্ক যে তথ্য পাঠায়, তাতে আরও অবাক হয়ে যাই।”

সৌমিত্রবাবুর দাবি, ব্যাঙ্ক চেক বইয়ের যে ছবি পাঠায়, তাতে তিনি দেখেন, তাঁর বাঁ হাতের সই নকল করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ১৫ সংখ্যাটি পেনের কালিতে অদল-বদল করে ৪৫ করা হয়েছে। সে ভাবেই ওই ১২ মাস ৪৫ হাজার টাকা করে বেতন তুলেছেন গৌতম।

ওই ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের দাবি, অভিযুক্তকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গৌতম অবশ্য ফোনে বলেন, “আমারও বয়স ষাটের কাছাকাছি। প্রতারণা করার হলে আগেই করতাম। বেঙ্গালুরুর বাড়ি বিক্রি বাবদ কিছু দিতে আমিই সৌমিত্রবাবুকে বলেছিলাম। তিনিই ৩০ লক্ষ টাকা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। কোনও মাসে ১৫ হাজার আর কোনও মাসে ৪৫ হাজার টাকা বেতনের বিষয়টিও তাঁর অজানা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন