বাড়ি ভাঙলেও প্রাণে রক্ষা বাসিন্দাদের

সোমবার সন্ধ্যায় ৬০ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের তিন তলা বাড়ির বারান্দা ভাঙার পরেও নিজে বেঁচে যাওয়ার জন্য ‘উপরওয়ালাকেই’ ধন্যবাদ দিচ্ছেন জয়প্রকাশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
Share:

অপেক্ষা: বাড়ি ভাঙার পরে রাস্তায় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

দুই ছেলে ঘরে ছিল না। স্ত্রী কাজ সেরে ঘরে ঢুকেই জানান, বারান্দার ছাদ থেকে চুন-সুরকি খসে পড়ছে। স্ত্রীর কথা বলা শেষ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দোতলার বারান্দার ছাদ। কোনও রকমে স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে পাশের এক ভাড়াটের ঘরে ঢুকিয়ে দিলেও নিজে ফেঁসে গিয়েছিলেন জয়প্রকাশ সিংহ।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যায় ৬০ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের তিন তলা বাড়ির বারান্দা ভাঙার পরেও নিজে বেঁচে যাওয়ার জন্য ‘উপরওয়ালাকেই’ ধন্যবাদ দিচ্ছেন জয়প্রকাশ। তবে এ দিনের ঘটনায় শুধু তিনি নন, বেঁচে গিয়েছেন ৬০ জন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে কেউ বাড়িতে ছিলেন, কেউ আবার বাইরে। কিন্তু প্রাণে বাঁচাটা যে সকলের কাছেই ‘মিরাক্‌ল’ মঙ্গলবার সকালে জানালেন ওই বাড়ির প্রায় সকলেই। যদিও সোমবারের ঘটনার পরে কেউই বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। সকলকেই বাড়ির উল্টো দিকে রাস্তার ধারে, ফুটপাথে তক্তপোষ পেতে রাত কাটাতে হয়েছে। পরিবারের মহিলাদের কেউ কেউ আশপাশে আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ আবার পাশের কোনও এলাকায় নিজেদের দোকানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

ওই ভেঙে পড়া বাড়িরই তিন তলার বাসিন্দা ভাড়াটে রীতা গুপ্ত। স্বামী পরশ গুপ্ত কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে গিয়েছেন। তারই মাঝে সোমবার সন্ধ্যায় বারান্দা ভেঙে পড়ায় পুলিশ ও দমকল এসে সকলকে বাইরে বের করে আনে। রাতে মেয়েকে নিয়ে ফুটপাথে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে পাশের এলাকায় নিজেদের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। সকালে ফের বাড়ির বাইরে এসে শুরু করেন অপেক্ষা। কারণ বারান্দা ভেঙে পড়ার পরে তাড়াহুড়োয় বেরোতে গিয়ে কিছু না নিয়েই চলে আসতে হয়েছে তাঁদের।

Advertisement

বাড়ির বাসিন্দাদের অনেকেই আত্মীয়ের বা়ড়িতে রাতটুকু আশ্রয় নিয়ে দিনের আলো ফুটতেই বাড়ির বাইরে এসে অপেক্ষা করেছেন। যদিও পুলিশ মঙ্গলবারও কাউকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। পুরসভার কর্মীরা পৌঁছে বারান্দার বাকি বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেন।

পুলিশ ও পুরসভা জানিয়েছে, বাড়িটি পুরনো হওয়ার জন্যই এই বিপত্তি ঘটে। তিন তলা বাড়িটিতে মোট ৪৩টি ঘর রয়েছে এবং সব ক’টি ঘরেই ভাড়াটে ছিল। মালিকদের পাঁচ জন অংশীদারের এক জন মণীশ রাঠি। আগে তাঁর এক তলায় অফিস ছিল বলে প্রতি দিনই এক বার করে আসতেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে সেই অফিসও বন্ধ। যদিও ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে তিনি মঙ্গলবার সকালেই ছুটে আসেন।

তাঁর দাবি, ‘‘বাড়িটি পুরনো হলেও বিপজ্জনক ছিল না। এক-একটা দিক সারানো হচ্ছিল। তারই মাঝে বারান্দার এক দিকের অংশ ভেঙে প়ড়েছে।’’ ভবিষ্যতে পুলিশ ও পুরসভার পরামর্শ মেনে তিনি পরবর্তী কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন