Fire Accident

প্রাণ বাঁচাতে ব্যাগ তৈরির কাপড়ের দড়ি জানলায় বেঁধে নেমে এলাম 

ঘরের এক কোণে রাখা ছিল ব্যাগ তৈরির কাপড়ের দড়ির রিল। মহিলারা টাকাপয়সা রাখার যে ছোট ছোট চামড়ার ব্যাগ ব্যবহার করেন, সেগুলির চেন এক ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। আমি ওই কাজই করি। ওই কাপড়ের ২০০ মিটার রিলের দড়ি পাওয়া যায়।

Advertisement

মহম্মদ সাবির

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:২৮
Share:

রক্ষা: এই দড়ি জানলার সঙ্গে বেঁধেই নীচে নামেন মহম্মদ সাবির, তাঁর পরিবার ও বহুতলের একাধিক বাসিন্দা। —নিজস্ব চিত্র।

ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ‘আগুন’, ‘আগুন’ চিৎকারে। ঘরের দরজা খুলে দেখি, ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চার দিক। দরজা খুলতেই চোখ জ্বলে গেল। তত ক্ষণে পাঁচতলা বাড়ির বিভিন্ন তলায় লোকজন ভয়ে দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে। পরিবারের লোকজনও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে। নীচ থেকে ধোঁয়া উপরে উঠে আসছে। তাই কী করে বাড়ির বাইরে যাব, বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময়ে মনে হল, জানলা ভেঙে যদি নীচে কোনও ভাবে নামতে পারি, তারই চেষ্টা করব। না হলে অক্সিজেনের অভাবে ঘরের ভিতরেই পরিবার নিয়ে মারা যাব। কখনও জীবনে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি।

Advertisement

ঘরের এক কোণে রাখা ছিল ব্যাগ তৈরির কাপড়ের দড়ির রিল। মহিলারা টাকাপয়সা রাখার যে ছোট ছোট চামড়ার ব্যাগ ব্যবহার করেন, সেগুলির চেন এক ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। আমি ওই কাজই করি। ওই কাপড়ের ২০০ মিটার রিলের দড়ি পাওয়া যায়। সেগুলি বেশ শক্ত। সেই দড়িই দোতলার খোলা জানলার সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দিলাম। কিন্তু দড়ি ধরে ঝুলে নামতে গিয়ে যদি অন্য দুর্ঘটনা ঘটে, তখন ওই পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে কিংবা আমার পরিবারের লোকজনকে কে দেখবে, তা নিয়েও চিন্তা হচ্ছিল। তবে পরে মনে হল, যে ভাবে ধোঁয়া পাঁচতলা বাড়ির ভিতরে ছড়িয়ে গিয়েছে, তাতে ছাদেও ওঠা যাবে না। ঘরের ভিতরে আবার গ্যাসের সিলিন্ডারও রয়েছে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তখন। সাহস করে দড়ি ধরে বাড়ির দেওয়ালে পা রেখে রেখে নামা শুরু করলাম। সারা শরীরের ভারে তখন হাতের তালু জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে। খানিকটা নামার পরে মনে হচ্ছিল এই বুঝি পড়ে যাব। কিন্তু তত ক্ষণে দেখলাম, বাড়ির নীচে অন্য প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে গিয়েছেন। দড়ি ধরে খানিকটা নেমে আসার পরে ধীরে ধীরে তাঁরা আমাকে নীচে নামিয়ে নিলেন। একই ভাবে আমার স্ত্রীও নেমে এলেন।

এ দিন ভোর সাড়ে ৪টেয় আগুন লাগে আমাদের বহুতলের পাশের একটি গুদামে। দমকল এসে ৬টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তত ক্ষণে আমাদের মতো বহু পরিবারের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ঘরের ভিতরে আগুনের তাপে জিনিসপত্র, টাকাপয়সা— সব পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ যে, আমি কিংবা আমাদের মতো অনেকেই দড়ি বেয়ে অক্ষত অবস্থায় নেমে আসতে পেরেছি। মহম্মদ রব্বানি নামে আমাদের এক প্রতিবেশী দড়ি ধরে নামতে গিয়ে নীচে পড়ে যান। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি এখনও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। দড়ি ছেড়ে পড়ে যাওয়ার পরে তিনি কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না, কী করে তিনি নীচে পড়ে গেলেন, কী করেই বা তাঁর হাতে আগুনের তাপ লেগেছে। তবে কপাল ভাল যে, এত বড় ঘটনায় তেমন শারীরিক ক্ষতি কারও হয়নি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন