Fire in Anandapur

বাঁধন খোলা যায়নি, পুড়ে মৃত রেফ্রিজারেটর চাপা পড়া পোষ্য

কার্তিকের পোষ্য, স্পিৎজ় প্রজাতির আড়াই বছরের কুকুর জেলি। রবিবার সকালে আনন্দপুরের বস্তিতে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৪
Share:

আগুনে বেঁচে যাওয়া দুই পোষ্য। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ঝুপড়ির পোড়া ঘরের মাঝ বরাবর উল্টে পড়ে থাকা রেফ্রিজারেটর তুলে সোজা করার ক্ষমতা নেই মাঝবয়সি কার্তিক হাজরার। সেখানে দাঁড়িয়েই অঝোরে কেঁদে চলেছিলেন তিনি। রেফ্রিজারেটরের নীচে ছড়ানো সাদা লোম। পোড়া ঘরের চাল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় সবটা ভাল করে ঠাহর করাও যাচ্ছে না। সে দিকে দেখিয়ে কোনও মতে কার্তিক বললেন, ‘‘ওই ফ্রিজের নীচেই চাপা পড়ে গিয়েছে জেলি। অন্য দু’জনকে বার করতে পারলেও জেলিকে বার করতে পারেনি আমার ছেলেটা। ফ্রিজের নীচে পড়েই সব শেষ!’’

Advertisement

কার্তিকের পোষ্য, স্পিৎজ় প্রজাতির আড়াই বছরের কুকুর জেলি। রবিবার সকালে আনন্দপুরের বস্তিতে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। পেশায় কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী কার্তিক জানান, এ দিন সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সোনালি পরিচারিকার কাজ করেন। তিনিও কাজে বেরিয়ে যান। ঘরে ছিলেন তাঁদের ছেলে দেব এবং পোষ্য তিনটি কুকুর।

আগুন, আগুন চিৎকার শুনে বাইরে দেখতে যান দেব। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত তা গ্রাস করে নেয় কার্তিকদের টালির ঘর। সেই সময়ে জেলি ছাড়াও ঘরে ছিল দেবদের পোষা আরও দু’টি কুকুর। একটি ল্যাব্রাডর প্রজাতির। তার নাম কালী। অন্যটি দেশি কুকুর, নাম দুষ্টু। তিনটিই বাঁধা ছিল রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে। কালী আর দুষ্টুকে দেব বার করতে পারলেও জেলিকে পারেননি। কারণ, তার বাঁধন খোলা যায়নি। প্রতিবেশীদের ধারণা, বাঁধন ছাড়ানোর জন্য জেলি প্রাণপণ টানাটানি শুরু করতেই রেফ্রিজারেটর তার উপরে পড়ে যায়। দেবের কথায়, ‘‘এত দ্রুত আগুন ছড়িয়েছিল যে, চেষ্টা করেও ফ্রিজ সরিয়ে জেলিকে বার করতে পারিনি।’’

Advertisement

ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, পোড়া বস্তির ভিড়ে তখন রাস্তার ধারেই এক জায়গায় বাঁধা কালী। একটানা চিৎকার করে চলেছে সে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর মধ্যেই সেখানে পৌঁছে জিজ্ঞাসা করেন, ভিতরে কেউ আটকে আছেন কি না। কালীকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকা কার্তিকের স্ত্রী সোনালি দমকলকর্মীদের বলেন, ‘‘আমাদের জেলি ভিতরে রয়েছে স্যর! একটু দেখবেন, যদি বার করে আনা যায়!’’ নিরুপায় দমকলকর্মীরা পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে সব বোঝার অবস্থাতেই নেই তখন সোনালি।

পরে অবশ্য কালী আর দুষ্টুকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছে হাজরা পরিবার। কার্তিকের আফসোস, ‘‘আমি থাকলে তিনটেকেই বার করে আনতাম। আগুন লেগেছে শুনে কাজ ফেলে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু তত ক্ষণে এই অবস্থা।’’ কাঁদতে কাঁদতে কার্তিক বলে চলেন, ‘‘ওদের সন্তানের মতো আগলে রাখতাম। কোথায় বেরিয়ে যাবে, কার ঘরে ঢুকে যাবে, সেই জন্য রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে বেঁধে রাখা হত। তার ফল যে এমন হবে, ভাবতেও পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন