‘ছেলেকে বিশ্বাস করি না’, বলছেন পরিত্যক্ত বৃদ্ধ

সত্যব্রতবাবুর সঙ্গে এক বাড়িতেই থাকতেন তাঁর খুড়তুতো দাদা সুব্রত বর্ধন।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

সত্যব্রত বর্ধনকে ভোটার তালিকায় তাঁর নাম দেখাচ্ছেন এক স্থানীয় যুবক। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে অসুবিধে ছিল, তাই সত্তরোর্ধ্ব বাবাকে সোদপুর প্ল্যাটফর্মে ‘রেখে’ এসেছিলেন ছেলে! তাঁর দাবি, স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। কিন্তু বাবার সঙ্গে থাকতে চান না স্ত্রী। তাই বৃদ্ধ বাবা সত্যব্রত বর্ধনের ঠাঁই হয়েছে রেলস্টেশনে। দিন গুজরান হচ্ছে ভিক্ষা করে। তবে এ বার নাকি বিবেক জাগ্রত হয়েছে ছেলের! বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। রাখতে চান ভাড়াবাড়িতে। তবে ছেলের সঙ্গে ফিরতে রাজি নন বৃদ্ধ বাবা। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে বিশ্বাস করি না। ও আমাকে মেরেও ফেলতে পারে।’’

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার সত্যব্রতবাবুর কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। খবর দেখে কার্যত হতবাক হন তাঁর পড়শিরা। বাকরুদ্ধ সত্যব্রতবাবুর আত্মীয়েরাও। তাঁদের অভিযোগ, যে স্ত্রীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিষ্কৃতি পেতে চাইছেন ইন্দ্রনীল, সেই স্ত্রীর সঙ্গে অনেক আগেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে তাঁর।

দক্ষিণ দমদমের সাতগাছি বটতলা প্রতাপাদিত্য কলোনিতে বাড়ি ছিল সত্যব্রতবাবুর। অভিযোগ, মাস ছয়েক আগে সোদপুর স্টেশনে বাবাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান ইন্দ্রনীল। তার পর থেকে ট্রেন যাত্রীদের কাছে হাত পেতে দিন চলে অসুস্থ, অশক্ত সত্যব্রতবাবুর। কেউ ওষুধ কিনে দেন, কেউ পোশাক, কেউ বা খাবার। এক সময়ের স্বচ্ছল সত্যব্রতবাবু বলেছিলেন, ‘‘কতদিন যে ভাল করে ভাত খাইনি!’’ সত্যব্রতবাবুর খবর দেখার পরে পড়শিরা জানতে পারেন, তিনি সোদপুর প্ল্যাটফর্মে রয়েছেন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সত্যব্রতবাবুর সঙ্গে এক বাড়িতেই থাকতেন তাঁর খুড়তুতো দাদা সুব্রত বর্ধন। এখন তিনি রয়েছেন হায়দরাবাদে বোনের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘খবরের কাগজেই ভাইয়ের কথা জানতে পারি। ইন্দ্রনীল যে এমন করতে পারে, ভেবে শিউরে উঠছি!’’ সুব্রতবাবুর অভিযোগ, বাবার সঙ্গে কখনওই ভাল ব্যবহার করতেন না ইন্দ্রনীল। ওঁর নামে বাড়ি লিখে দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দিতেন প্রায়েই। স্ত্রীর সঙ্গেও বনিবনা হত না তাঁর। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রীর নামে মিথ্যা কথা বলছে ইন্দ্রনীল। ওর স্ত্রী মানিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল, ইন্দ্রনীলই পারেনি। সত্যব্রতর সঙ্গে বৌমার এমন কোনও সমস্যা ছিল না যাতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’

সত্যব্রতবাবুর এক পড়শি জানান, ইন্দ্রনীলের স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার পরে তিনিও সেখানে চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেও তিনি শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে চাননি। শেষে পুলিশের সাহায্য নেন তাঁর স্ত্রী। তখন বাড়ি না ফিরে ওই এলাকাতেই অন্য কোথাও থাকতেন ইন্দ্রনীল। পাড়ার লোকেরা তাঁকে খুঁজে এনে বাবার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য চাপ দেন। অভিযোগ, এর পরেই বাবাকে দিয়ে বাড়ি লিখিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেন তিনি। তার পরে বাবাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন। পাড়ার লোকেরা চাপ দেওয়ায় তিনি জানান, মধ্যমগ্রামে যেখানে তিনি কাজ করেন, সেখানেই বাবাকে নিয়ে যাবেন।

ইন্দ্রনীলকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী বাবার সঙ্গে থাকতে চান না। কিন্তু ওটা কি একটা রাখার জায়গা, নাকি বৃদ্ধ বাবাকে ও ভাবে ফেলে আসা যায়? ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘জানি তো। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। বাড়িতে সমস্যা হচ্ছিল। পয়লা এপ্রিল বাবাকে আমার কাছে নিয়ে আসব।’’ এতদিন আনেননি কেন? তাঁর জবাব, ‘‘বললাম তো উপায় ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন