Street Dog

পথকুকুরকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরে দেহ লোপাট, অভিযুক্ত তবু অধরা

একটি পথকুকুরকে পিটিয়ে মারার এমন দৃশ্য শোরগোল ফেলেছে সমাজমাধ্যমে। ভাইরাল হয়েছে এই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। যিনি মারছেন, তাঁকে দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে মতামতের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সমাজমাধ্যমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৫
Share:

পথকুকুরকে লোহার রড দিয়ে মারার এই সিসিটিভি ফুটেজই ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। 

­­লোহার রডের ঘা খেয়ে পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র বসে ছিল সে। তবে সেখানেও রক্ষা পেল না পথকুকুরটি। তাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে পিছন থেকে তার মাথায় সজোরে মারা হল লোহার রড। চিৎকার করতে করতে রাস্তায় পড়ে ছটফট করার সময়েও রেহাই নেই। মাথায় পড়ল লোহার রডের আরও কয়েক ঘা! কাঁপতে কাঁপতে এক বার উঠে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা করেও লুটিয়ে পড়ল সে। সেই মুহূর্তে ফের রডের ঘা। আর উঠল না কুকুরটি।

Advertisement

একটি পথকুকুরকে পিটিয়ে মারার এমন দৃশ্য শোরগোল ফেলেছে সমাজমাধ্যমে। ভাইরাল হয়েছে এই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। যিনি মারছেন, তাঁকে দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে মতামতের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সমাজমাধ্যমে। তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পশুপ্রেমী অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে খোঁজ করে জানা গেল, ঘটনাটি কৃষ্ণনগর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানকার চাষাপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলা এ নিয়ে বুধবার রাতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগকারীর দাবি, অতনু দাস নামে এক ব্যক্তি ওই পথকুকুরটিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মেরেছেন। আরও অভিযোগ, এর পরে কুকুরের দেহের ময়না তদন্ত করানো হতে পারে জেনে দেহটি লোপাটও করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত অতনু ফোনে দাবি করেছেন, ‘‘কুকুরটি অসুস্থ ছিল। মেরে খুব একটা ভুল কিছু করিনি।’’ যদিও পুলিশ তাঁকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি।

নিশা বিশ্বাস নামে এলাকার এক পশুপ্রেমীর দাবি, কুকুরটির নাম লালু। বয়স সাত বছর। চাষাপাড়ারই বাসিন্দা ডলি এবং তাঁর স্বামী প্রলয় ঘোষ কুকুরটিকে খাওয়াতেন। লকডাউনের আগে কুকুরটির ক্যানসার ধরা পড়ে। সেই সময়ে নিশা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে দাবি। নিশার কথায়, ‘‘রবিবার দুপুরে ডলিদি ফোন করে বলেন, অতনু নাকি কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরেছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, কেউ নাকি ওঁকে বলেছিল যে, কুকুরটির রেবিস হয়েছে। তাই নিজেকে ডাক্তার দাবি করে ঘুরে বেড়ানো অতনু কুকুরটিকে একটি ইনজেকশন দিতে যান। সেই সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই লালু কামড়াতে যায়। সেই রাগেই নাকি লোহার রড দিয়ে মাথা ফাটিয়ে কুকুরটিকে খুন করেছেন অতনু।’’ নিশার আরও দাবি, ‘‘আমি অতনুকে ফোন করে জানতে চাই, তিনি এমন কেন করেছেন। তবে ওঁর মধ্যে কোনও অনুতাপ নেই। উল্টে আমি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জোগাড় করেছি শুনে দেহ ওখান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’’

Advertisement

এই ঘটনায় পুলিশ ‘প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি’ আইনের ১১ নম্বর ধারায় মামলা করেছে। তার আগে অবশ্য ওই এলাকার পশুপ্রেমীরা রাস্তা অবরোধ করেন কিছু ক্ষণের জন্য। পশুপ্রেমীদের প্রশ্ন, এই ধারা এমনিতেই নন-কগনিজ়েবল, অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া অভিযুক্তকে ধরা যাবে না, সেই যুক্তি দেখাতে পারে পুলিশ। শাস্তিও সর্বাধিক ৫০ টাকা জরিমানা। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ ধারা কেন যুক্ত করে মামলা করল না পুলিশ, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, এই ধারা অনুযায়ী, ৫০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হয়, এমন যে কোনও পশুকে ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করলে অভিযুক্তের পাঁচ বছর পর্যন্ত হাজতবাসের সাজা হতে পারে।

এ নিয়ে অভিনেতা তথা চিত্র পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ওই ব্যক্তি কুকুরটির মাথা ফাটিয়ে দিয়ে বীরদর্পে লোহার রড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন লোক এর পরেও গ্রেফতার না হয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেটা আরও চিন্তার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন