আবেশের মৃত্যু

গাফিলতিরও আঁচ, মামলার চিন্তা পুলিশে

আঘাত যে ভাবেই লাগুক, তার পরে জরুরি ছিল দ্রুত চিকিৎসা। সেটা না-পাওয়াটাও আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে লালবাজার। পাশাপাশি জানিয়ে দিচ্ছে, চিকিৎসায় বিলম্বের পিছনে চরম গাফিলতির ভূমিকা উঁকি মারছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৩
Share:

আবেশ দাশগুপ্ত

আঘাত যে ভাবেই লাগুক, তার পরে জরুরি ছিল দ্রুত চিকিৎসা। সেটা না-পাওয়াটাও আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে লালবাজার। পাশাপাশি জানিয়ে দিচ্ছে, চিকিৎসায় বিলম্বের পিছনে চরম গাফিলতির ভূমিকা উঁকি মারছে।

Advertisement

এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করা যায় কি না, তা নিয়ে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।

২৩ জুলাইয়ের ওই বিকেলে সানি পার্কের ঘটনাস্থল থেকে আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে এতটা দেরি হল কেন, তা নিয়ে শনিবার নতুন ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা-সূত্রের বক্তব্য: দুর্ঘটনার ফলেই যে সতেরোর বছরের কিশোরটির শরীরে আঘাত লেগেছিল, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে সে তত্ত্ব অনেকটা ভিত্তি পেয়েছে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না, কেন ওকে বিনা চিকিৎসায় অতক্ষণ ফেলে রাখা হল। তদন্তকারীদের মতে, এ জন্যই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। শেষমেশ ‘শক’-এ মৃত্যু হয়েছে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘ছেলেটি জ্ঞান হারানোর আগে বমি করে ফেলেছিল। ডাক্তারেরা বলেছেন, এটা শকের উপসর্গ।’’ এবং পুলিশের মতে, প্রাথমিক চিকিৎসা আরম্ভে অত্যধিক দেরিই এর কারণ।

Advertisement

কেন দেরি হল, তা খোলসা করতেই ফের জিজ্ঞাসাবাদ। লালবাজারের দাবি: বন্ধুদের কেউ কেউ জানিয়েছে, ২৩শে বিকেলে রক্তাক্ত আবেশকে জলদি হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য রক্ষী ও আবাসিকদের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকী, তিন কিশোরী ও এক কিশোর মিলে আবেশের জামা খুলে ক্ষতস্থান পরিষ্কারের চেষ্টা করার সময়েও কেউ হাত বাড়ায়নি। যে কারণে একটি মেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের লোকজনের উদ্দেশে চেঁচামেচিও করেছিল।

স্থানীয়দের এ হেন ‘নির্লিপ্তি’র বিবরণ শুনে গোয়েন্দারা ধন্দে পড়েছেন। দিশা খুঁজতে রবিবার আবেশের আট বন্ধুকে লালবাজারে তলব করা হয়। ওরা কেউ অবশ্য আবেশ আহত হওয়ার সময়ে ঘটনাস্থলে ছিল না। ২৩শে বিকেলে সানি পার্কের আবাসনটিতে যে রক্ষীরা ডিউটিতে ছিলেন, এ দিন তাঁদের তিন জনকে ফের ডাকা হয়। তলব করা হয়েছিল লেখক অমিত চৌধুরী ও তাঁর মেয়েকেও, যার জন্মদিনের পার্টি ঘিরে পুরো ঘটনার সূত্রপাত।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, আবেশের বন্ধুরা, অমিতবাবু, আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়িচালকেরা ২৩শে দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের পুঙ্খানুপুঙ্খ যে বিবরণ আগে দিয়েছেন, সেগুলো ভিডিওয় রেকর্ড করা হয়েছে। ‘‘ওঁদের আগের বয়ানের সঙ্গে এ দিনের বয়ান আমরা মিলিয়ে দেখেছি। কয়েক জনের কথায় ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে।’’— বলেন এক গোয়েন্দা-কর্তা। কেন, তার ব্যাখ্যা পেতে ফের ওঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। কয়েক জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু এই জাতীয় ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কি গাফিলতির অভিযোগ আনা সম্ভব?

‘‘দুর্ঘটনায় জখম হয়ে কেউ রাস্তায় পড়ে আছেন, আর পাশ দিয়ে ভিড় চলে যাচ্ছে, এমন ক্ষেত্রে হয়তো সে ভাবে সম্ভব নয়। কিন্তু আবেশের ঘটনাটি ঘটেছে একটি আবাসনের ভিতরে, যেখানে সুরক্ষার দায়িত্বে লোক আছে, আবাসিকেরাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’’— বলছেন এক অফিসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন