অভিজিৎ সিংহ।—ফাইল চিত্র।
ছেলের খোঁজ পেতে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিখোঁজ পড়ুয়া অভিজিৎ সিংহের পরিবার। ঘটনাচক্রে, বুধবার সেই সাক্ষাতের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিজিৎ-কাণ্ডে বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করলেন লালবাজারের কর্তারা।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না অভিজিতের পরিবারের সামনে। অভিজিতের বাবা উমেশ্বর সিংহ এবং তাঁর ছোট ছেলে অভিনব সকালে নবান্নে হাজির হন। তাঁদের সঙ্গে জিতেন্দ্র কুমার ও মনোজ সিংহ নামে দুই আত্মীয় ছিলেন। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যান তাঁরা। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার সময়ে পুলিশি পাহারায় এক বার নীচে আসেন তাঁরা। ক্যান্টিনে ভাত খেয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে উপরে উঠে যান। তখন মুখ্যমন্ত্রী নবান্নেই ছিলেন। বিকেল ৩টে ২৫ নাগাদ উমেশ্বরদের ভিআইপি গেটের বদলে অন্য গেট দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। নবান্ন থেকে বেরিয়ে উমেশ্বর বলেন, ‘‘সকাল থেকে বসে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁর দফতরের অফিসার শঙ্খশুভ্রবাবুর কাছে আবেদন জমা দিয়েছি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, উমেশ্বর যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন, সে খবর পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তার পরেই উমেশ্বরবাবুকে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ডাকছেন। পুলিশ আবার তাঁদের চার জনকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যায়। বিকেল চারটে নাগাদ উমেশ্বরবাবু সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারও ছিলেন। তিনি পুলিশ কমিশনারকে তাড়াতাড়ি ছেলেকে খুঁজে বার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা খুব খুশি।’’ উমেশ্বরবাবু এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে টালা থানার ওসি-র বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওসি হস্টেলে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে আড্ডা মারেন। তিনি কিছুই করেননি। মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কথা জানিয়েছি।’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই টালা থানার ওসি বদলি হয়েছেন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এটা রুটিন বদলি।
বিকেলে লালবাজার থেকে জানানো হয়, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের ডিসি (২) সুজিত মিত্রের নেতৃত্বে একটা বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে। তাতে গুন্ডাদমন শাখা, সাইবার শাখার বাছাই করা অফিসারদের রাখা হয়েছে। নিখোঁজের ছবি রেল পুলিশ ও বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। অভিজিতের ভাই অভিনব বলেন, ‘‘আমার দাদার সঙ্গে কারও কোনও গোলমাল ছিল না। তাই কী ভাবে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’
আর জি করের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ সিংহ শনিবার রাতে নিখোঁজ হন। তাঁর বাড়ির লোক অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পরে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হলেও এ দিন কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নয়, তদন্তের স্বাভাবিক নিয়মেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্তে বিশেষ কোনও অগ্রগতির কথা এখনও পর্যন্ত জানাতে পারেনি লালবাজার।