বৃষ্টি নেই, একাদশী ভাসল জনস্রোতে

তিথি মেনে পুজো শেষ হলেও দাঁড়ি পড়েনি উৎসবে। বুধবার শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে উৎসাহী মানুষের ঢল বুঝিয়ে দিল সেটাই।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৫
Share:

একাদশীর সন্ধ্যায় পুজো দেখার ঢল। বুধবার, কলেজ স্কোয়ারে। — শুভাশিস ভট্টাচার্য

তিথি মেনে পুজো শেষ হলেও দাঁড়ি পড়েনি উৎসবে। বুধবার শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে উৎসাহী মানুষের ঢল বুঝিয়ে দিল সেটাই।

Advertisement

পুজোর প্রথম দিন থেকেই অসুর হয়ে শহরে হানা দিয়েছিল আবহাওয়া। প্রতিদিনই কোনও না কোনও সময়ে দফায় দফায় তুমুল বৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। সপ্তমী এবং নবমীর দিন প্রবল বৃষ্টিতে জলও জমেছিল কিছু রাস্তায়। কিন্তু একাদশীতে আকাশ ছিল পরিষ্কার। সেই সঙ্গে শহরের রাস্তা থেকে উধাও যানজট। ফলে উৎসাহী জনতা বুধবার সন্ধ্যায় ভিড় জমিয়েছে আলিপুর, গড়িয়াহাট, উল্টোডাঙা-সহ শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে।

তিথি অনুযায়ী কিছু প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবারই। কিন্তু বুধবার মহরম থাকায় বন্ধ ছিল বিসর্জন। সেই সঙ্গে এ দিন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ছুটি থাকায় রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। আর সেই সুযোগে পরিবার নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই মণ্ডপে জমা হতে থাকেন ঠাকুর দেখতে উৎসাহী জনতা। সন্ধ্যার এই ভিড়ের আভাস অবশ্য বুধবার সকালেই পেয়েছিল পুলিশ। সকাল দশটা নাগাদ দেশপ্রিয় পার্কের মোড়ে দাঁড়িয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এক পুলিশ অফিসারকে ওয়াকিটকিতে অনুরোধ করতে শোনা যায়, ‘‘অতিরিক্ত বাহিনী পাঠান। মণ্ডপে ঠাকুর নেই, তবু জনতা ভিড় করছে।’’ দেশপ্রিয় পার্কের প্রতিমার বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবারই। তা সত্ত্বেও সেখানে ‘হাজার হাত’ দেখতে বুধবার সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। সন্ধ্যা হতেই সেই হুজুগে ভিড় ছড়িয়ে যেতে থাকে ত্রিধারা, একডালিয়া এবং চেতলা অগ্রণীর মতো পুজোয়। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে বেহালা, বড়িশা, হরিদেবপুরের ক্লাবগুলিতে। তবে বুধ-সন্ধ্যায় সব জায়গার ভিড়কে ছাপিয়ে যায় সুরুচি সঙ্ঘ। পুলিশের হিসেবে, এ দিন প্রায় অন্য দিনের মতোই ভিড় হয়েছিল ওই মণ্ডপে।

Advertisement

দক্ষিণের মতো না হলেও উত্তরের হাতিবাগান-উল্টোডাঙার মণ্ডপগুলিতে ভিড় টানার লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো। মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়ারেও যথেষ্ট ভিড় ছিল এ দিন। দশমীর রাতে জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোয় ‘ডাউন বনগাঁ লোকাল’ দেখতে এতটাই ভিড় হয়েছিল যে, বন্ধ করে দিতে হয় মণ্ডপ। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সেখানে ভিড় থাকলেও জনজোয়ার ছিল না।

এক সময়ে বোধনের আগে ভিড় হত না শহরের কোনও মণ্ডপেই। জনজোয়ার দেখা যেত শুধুমাত্র সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীতে। কিন্তু গত দশকের প্রথম দিক থেকে পুজোর উদ্‌যাপন ক্রমেই যেন দীর্ঘায়িত হয়ে চলেছে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পর্যন্ত আর অপেক্ষা না করে লোকজন ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়ছেন তৃতীয়া থেকেই। এ বছর মহালয়াতেই উদ্বোধন হয়েছে বিভিন্ন পুজোর। তা সত্ত্বেও একাদশীর সন্ধ্যায় এত ভিড় কেন?

দক্ষিণ কলকাতার এক পুজোকর্তা জানান, শহরে আগে নির্দিষ্ট কিছু মণ্ডপেই ভিড় হত। তাদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কিন্তু এখন তা পাল্টে গিয়েছে। শহরের দর্শনীয় পুজোর সংখ্যা এখন প্রচুর। এবং শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তাদের বিস্তার। ফলে পুজোর ওই কয়েক দিনে ভিড় ঠেলে সব পুজো দেখা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। একাদশীর সন্ধ্যায় সেই কারণেই এমন ভিড়। ওই কর্তার কথা যে ঠিক, তার প্রমাণও মিলেছে কলেজ স্কোয়ারে ঠাকুর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কথায়।

পুলিশের একাশের দাবি, এ বার রাসবিহারী এলাকায় পুজোর দিন যাঁরা ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন, ভিড়ে ‘বন্দি’ হয়ে তাঁদের অনেকেই আর টালিগঞ্জ, নাকতলা বা বেহালার দিকে পুজো দেখতে যেতে পারেননি। অনেকেরই অনেক বড় পুজো দেখা বাকি রয়ে যায়। এ দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন বড় মণ্ডপে ভিড় তারও একটা কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন