চলন্ত মেট্রোয় হঠাৎ আগুন, পাতালেই যেন নরকদর্শন

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন ও ময়দান স্টেশনের মাঝে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ট্রেনে এমনই নরকযন্ত্রণা ভোগ করলেন দমদমগামী মেট্রোর যাত্রীরা। বিভীষিকার সময়কাল ২০ মিনিটেরও কম বলে দাবি করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৫
Share:

মেট্রোর কামরায় আতঙ্কিত যাত্রীরা।

আগুনের লকলকে শিখা। দমবন্ধ করা কালো ধোঁয়া। আর ভিড়ে ঠাসা মেট্রোর কামরায় বন্দি অসহায় যাত্রীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন ও ময়দান স্টেশনের মাঝে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ট্রেনে এমনই নরকযন্ত্রণা ভোগ করলেন দমদমগামী মেট্রোর যাত্রীরা। বিভীষিকার সময়কাল ২০ মিনিটেরও কম বলে দাবি করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভুক্তভোগীদের মতে, মৃত্যুভয়ের প্রহর পৌনে এক ঘণ্টার কম কিছুতেই নয়।

যত দিন যাচ্ছে, ততই স্বাচ্ছন্দ্যহীন হচ্ছে কলকাতার মেট্রো-যাত্রা। ইদানীং তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিপদের আশঙ্কাও। চলতি বছরের এপ্রিলেই নেতাজি স্টেশনের কাছে থার্ড রেলে আগুন লাগে। ট্রেনের জানলা ভেঙে বেরিয়ে আসেন যাত্রীরা। তার পর গত অক্টোবরে ফের আগুন লাগে মহাত্মা গাঁধী রোডের কাছে সুড়ঙ্গের ভিতর।

Advertisement

এ দিন আগুনের পরিমাণ ছিল বেশি। আতঙ্কও। মুহূর্তে খবর ছড়ায় আগুন এগোচ্ছে। আসতে শুরু করে ধোঁয়াও। প্রাণভয়ে ট্রেনের পিছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন যাত্রীরা। ফলে প্রায় পদপিষ্ট হওয়ার জোগাড়। এসি কামরা হওয়ায় পরিস্থিতি দমবন্ধ। জানলা ভাঙার চেষ্টা করে কারও কারও হাত কেটে রক্তারক্তি। মোবাইলে আপনজনেদের ফোন করে আর্তি জানাচ্ছেন কেউ কেউ, ‘‘মরতে বসেছি, বাঁচাও।’’

আগুন নেভানোর চেষ্টা।—নিজস্ব চিত্র

শেষ পর্যন্ত স্বস্তির কথা এটাই যে, এ দিন কোনও প্রাণহানি হয়নি। তবে, অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ৪০ জন যাত্রী। এক জন যাত্রীর পা ভাঙে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৩৫ জন যাত্রীকে। ৫ জনকে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাকি কয়েকশো যাত্রী, যাঁরা মৃত্যুভয়ে সিঁটিয়ে ছিলেন ওই পৌনে এক ঘণ্টা, তাঁদের আতঙ্ক সহজে কাটার নয়।

আরও পড়ুন: আতঙ্ক-যানে এক বিকেল, মেট্রোর বন্ধ কামরায় অসহায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি

আর বোধ হয় কাটার নয় মেট্রো কর্তৃপক্ষের ‘নির্বিকার’ মনোভাবও। একের পর এক দুর্ঘটনা এবং দৈনন্দিন অব্যবস্থাতেও তাঁরা সমান অবিচল— অভিযোগ যাত্রীদের বড় অংশের। এ দিন ঘটনার পরেই মেট্রোর তরফে টুইট করে বলা হয়, উদ্ধারকাজ চলছে, অযথা ভয় পাবেন না। কিন্তু যাত্রীদের কাছে কোনও বার্তা পৌঁছয়নি। ছন্দক চট্টোপাধ্যায় নামে এক যাত্রীর কথায়, ‘‘বিপদের সময়েও কোনও ঘোষণা শুনতে পাইনি।’’ এ দিন যাত্রীদের অনেকেরই প্রশ্ন, কর্তৃপক্ষ কী করে বিপন্নদের প্রতি এতটা উদাসীন থাকতে পারেন?

মেট্রোর মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের খবর পাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। ৩৫ মিনিটে সবাইকে বার করা হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশকে খবর দিয়ে থার্ড লাইনের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ১০-১২ মিনিটের মধ্যে। তার আগে যাত্রীদের বার করা যেত না। কিন্তু ঠিক কী ভাবে আগুন লাগে, রাত পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি। মেট্রো সূত্রের খবর, ট্রেনের গা থেকে কিছু একটা খসে বিদ্যুৎবাহী লাইনে পড়ে। তার পরেই অগ্নিকাণ্ড। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর দাবি, মনে হচ্ছে চাকার তলায় ঘষা লেগে আগুন ছড়ায়।

খবর পেয়ে সাগরদ্বীপ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুরো ঘটনা মনিটরিং করছি। সবার চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য নিয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের বিষয়ে খোঁজ নেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন