নেহা সিংহ
প্রচণ্ড গতিতে ঘুরছিল বিনোদন পার্কের ‘হ্যাং গ্লাইডার’। হঠাৎই বিদ্যুৎচালিত সেই ঘূর্ণির কাপলিং ভেঙে একটি চেয়ার প্রায় দশ ফুট দূরে ছিটকে আসে। সিটে বসা দুই বোন দু’দিকে ছিটকে পড়েন। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে যায় এক জনের। নাক, মুখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। দাঁত, মুখ থেঁতলে গুরুতর জখম হন অন্য জনও। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি এক বোনকে। অন্য জনের অবস্থাও সঙ্কটজনক।
রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বেলিলিয়াস পার্কে। মৃত তরুণীর নাম নেহা সিংহ (২২)। গুরুতর জখম তাঁর বোন স্নেহা সিংহ (২৮)। সূত্রের খবর, হাওড়ার হাসপাতাল থেকে স্নেহাকে কলকাতার কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এ দিনের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রায় চার বছর আগে ঘটে যাওয়া নিক্কো পার্কের এক দুর্ঘটনার কথা। প্রায় ১৭ জন জখম হয়েছিলেন তাতে। সে বারও প্রশ্ন উঠেছিল বিনোদন পার্ক পরিচালনার খামতি নিয়ে। এ বারেও একই অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসন।
নেহার পরিবার সূত্রে খবর, বাবা রাজকুমার সিংহের সঙ্গে হাওড়ার ওই পার্কে এ দিন বেড়াতে গিয়েছিলেন দুই বোন। ঘুসুড়ির মালিপাঁচঘরার বাসিন্দা রাজকুমারবাবু পেশায় ফটোগ্রাফার। বড় মেয়ে স্নেহা বিবাহিতা। তাঁর স্বামী নৌবাহিনীতে কর্মরত। আচমকা এই দুর্ঘটনায় বিভ্রান্ত গোটা পরিবার। শোকে মুহ্যমান বাবা শুধু বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার যে মেয়েটি বেঁচে আছে, তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করছি।’’
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিলিয়াস পার্কের জমিটি পুরসভার হলেও প্রায় তিরিশ বছর আগে ‘পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থাকে পার্কের জন্য দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই এখানে চলছে পার্কটি। এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আগেও একাধিক বার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দশ বছর আগে হরিণের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের বিষয়টি সামনে আসে। পরেও ছোটখাটো অঘটন ঘটেছে এখানে।
হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর নির্দেশে এ দিন ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর এবং মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বেলিলিয়াস পার্কে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেব মেয়রের কাছে।’’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইমন সাউ বলেন, ‘‘যে অংশ থেকে চেয়ার ভেঙে পড়েছে সেটা মরচে ধরা। দেখলেই বোঝা যায়, কোনও রক্ষণাবেক্ষণই হয় না।’’ অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ্ছেন, ঘূর্ণি থেকে খেলনার মতো ছিটকে বেরিয়ে যায় সিটটা। অত বেগে এসে সিমেন্টের মেঝেতে পড়ায় আঘাতটা খুবই গুরুতর হয়। চোখের পলকে আনন্দের পরিবেশ বদলে যায় আর্তনাদ আর কান্নায়।
মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভায় এই নিয়ে আলোচনা করা হবে। সংস্থার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণ কেন ঠিক মতো করা হয়নি, তার জবাব চাওয়া হবে।’’
যে সংস্থা পার্কটি চালায়, তার কর্ণধার রামরতন চৌধুরী বলেন, ‘‘পার্কের দেখভালের জন্য কয়েক জন কর্মী রয়েছেন। তাঁরা কেন যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি, সেটা দেখছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, প্রতি বছরই রাইডগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয় বর্ষার পরে। এ বছর বর্ষা অনেক দিন ধরে থাকায় এখনও সেই কাজটা করা হয়ে ওঠেনি।
হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পার্কের পরিচালন সংস্থার বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।