আগাম জামিনই হল প্রতাপের

সাধারণ পুলিশকর্ম়ীদের আশঙ্কাই অবশেষে সত্যি হল। পুলিশের নিচুতলার আশঙ্কা ছিল— গোপালনগর-কাণ্ডে পুলিশকে নিগ্রহ এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রতাপ সাহাকে গ্রেফতারের বিষয়টি লালবাজার ঝুলিয়ে রাখবে। তার পরে বিষয়টি থিতিয়ে এলে আগাম জামিনের সুযোগ দেওয়া হবে প্রতাপকে। শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে আগাম জামিন পেলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা। বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, জামিন পেয়ে যাওয়ায় এ বার প্রতাপ কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিশ্চিন্তে ‘ভোটের কাজ’ করতে পারবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৬
Share:

সাধারণ পুলিশকর্ম়ীদের আশঙ্কাই অবশেষে সত্যি হল।

Advertisement

পুলিশের নিচুতলার আশঙ্কা ছিল— গোপালনগর-কাণ্ডে পুলিশকে নিগ্রহ এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রতাপ সাহাকে গ্রেফতারের বিষয়টি লালবাজার ঝুলিয়ে রাখবে। তার পরে বিষয়টি থিতিয়ে এলে আগাম জামিনের সুযোগ দেওয়া হবে প্রতাপকে। শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে আগাম জামিন পেলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা। বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, জামিন পেয়ে যাওয়ায় এ বার প্রতাপ কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিশ্চিন্তে ‘ভোটের কাজ’ করতে পারবে।

আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টিকে প্রতাপ সাহা ‘দিদির জয়’ বলে মন্তব্য করে তৃণমল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কতটা গভীর, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

গত ১৪ এপ্রিল গোপালনগর মোড়ে বিজেপির সভায় হামলা এবং বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে হেনস্থার জন্য বিজেপি যেমন প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল, তেমনই পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। প্রতাপের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান এবং পুলিশকে নিগ্রহ করার অভিযোগ এনেছিল আলিপুর থানা। সেখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ নম্বর ধারায় জামিন-অযোগ্য মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ ছাড়াও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিনটি জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল প্রতাপের বিরুদ্ধে।

জামিন-অযোগ্য ধারার মামলায় প্রতাপ আগাম জামিন পেলেন কী করে? আদালত সূত্রের খবর, আদালতে এ দিন প্রতাপের জামিনের বিরোধিতাই করেননি সরকারি আইনজীবী। আলিপুর আদালতে প্রতাপের আগাম জামিনের আবেদনের শুরুতেই বিজেপির দায়ের করা মামলার শুনানি হয়। প্রতাপের আইনজীবীরা বলেন, গোপালনগরে ওই দিন দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। সেখানে প্রতাপ সাহা ছিলেনই না। এর পরেই সরকারি আইনজীবী শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ওই মামলায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ থাকলেও কোন পক্ষই পুলিশের কাছে আঘাতের রিপোর্ট জমা দেয়নি। অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রেখে জেরারও প্রয়োজন নেই। ওই মামলার তদন্তকারী অফিসারও তাঁর কথায় সায় দেন।

এর পরে পুলিশের দায়ের করা মামলাটি নিয়ে শুনানি শুরু হয়। অভিযুক্তের আইনজীবীরা দু’টি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের কথা বলা মাত্রই আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘‘রাজনৈতিক সংঘর্ষের মামলায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে!’’ এর উত্তরে সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘পুলিশ মামলা করলেও তাতে আঘাতের রিপোর্ট নেই।’’ এমনকী অভিযুক্তের আইনজীবীর সুরে তিনি বলেন, ‘‘সিসিটিভিতে তেমন কিছুই নেই।’’ এর পরেই দুটি মামলায় প্রতাপের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।

সরকারি আইনজীবী হয়ে কেন তিনি আদালতে অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করলেন না? এর উত্তরে আদালতের বাইরে শ্যামাদাসবাবু বলেন, ‘‘তদন্তকারী অফিসার আমাকে যা তথ্য দিয়েছেন, আমি তাই বলেছি।’’ তদন্তকারী অফিসার অবশ্য তাঁর সহকর্মীদের জানিয়েছেন, সরকারি আইনজীবী যে এমন বলতে পারেন, তা তিনি ভাবতেও পারেননি।

পুলিশের নিচুতলা বলছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ঘটনার দিন গোপালনগর মোড়ে প্রতাপ সাহা আলিপুর থানার ওসির সঙ্গে প্রথমে তর্ক জুড়ে দেন। পরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতেও দেখা যায় তাঁকে। এ সবই পুলিশকে নিগ্রহ এবং সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার প্রমাণ। সিসিটিভি-র সেই ফুটেজ কেন আদালতে জমা দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্ন উঠছে। নিচুতলার পুলিশকর্মীরা বলছেন, তা ছাড়া ৩৫৩ ধারায় মামলা করলে আঘাতের রিপোর্ট দরকারই পড়ে না।

প্রতাপ সাহা জামিন পাওয়ায় পুলিশের নিচুতলা যে ক্ষুব্ধ সেই খবর লালবাজারে পৌঁছয় দুপুরেই। একেই গিরিশ পার্কের ঘটনা নিয়ে পুলিশ কমিশনারের রিপোর্টে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে শাসক দলের যোগাযোগের বিষয়টি অনুল্লেখিত থাকায় সাধারণ পুলিশেরা হতাশ। তার উপরে পুলিশি নিগ্রহে অভিযুক্ত প্রতাপ জমিন পেয়ে যাওয়ায় সেই ক্ষোভ যে আরও ছড়িয়ে পড়েছে তা বুঝতে দেরি হয়নি। লালবাজারের অস্বস্তি বাড়ে ডিসি সাউথ মুরলীধর শর্মার মন্তব্যে। মুরলীধর বলেন, ‘‘পুলিশের কাজে বাধাদান ও হামলার মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। তাড়াতাড়ি ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন