মায়ের সঙ্গে পিন্টু। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
দমদমের অমরপল্লিতে অত্যাচারের শিকার হওয়ার পরে সাত দিন কেটে গিয়েছে। এখনও শরীর জুড়ে ব্যথা। এত দিন আত্মগোপন করেছিলেন কেন? পুলিশের কাছে গেলেন না কেন? মধ্যমগ্রামের দোলতলার মিলনপল্লির বাসিন্দা বছর তিরিশের পিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘‘সকলের সামনেই তো যা ঘটার ঘটল। ও ভাবে মার খাওয়ার পরে কাউকে ভরসাই তো করতে পারছিলাম না!’’
গত ১০ অগস্ট দমদমের অমরপল্লি এলাকায় চুরির অপবাদে পিন্টুকে বাতিস্তম্ভে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে রঞ্জন ওরফে বিশ্ব দাস নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ থাকা পিন্টুকে শুক্রবার উদ্ধার করে পুলিশ। এ দিন পিন্টু জানান, আগে তিনি বিশ্বের দোকানে কাজ করতেন। পরে বিশ্বের দাদা উৎপল বিশ্বাসের দোকানে যোগ দেন। ঘটনার দিন উৎপলের হয়ে নাগেরবাজারে মাইক বাঁধছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে বেলা ১১টা নাগাদ অমরপল্লির পুকুর ঘাটে বিশ্ব তাঁকে দেখতে পেয়ে কলার ধরে টানতে টানতে নিজের দোকানের সামনে নিয়ে যায়। পিন্টু তার দোকানে চুরি করেছেন অপবাদ দিয়ে তাঁকে বাতিস্তম্ভে বেঁধে বাঁশপেটা করতে থাকে বিশ্ব। পিন্টুর কথায়, ‘‘মার খেতে খেতে মাথা দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকল। কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসেনি।’’ দুপুরের দিকে বাঁধন খুলে পিন্টুকে ভাড়াবাড়িতে নিয়ে যায় বিশ্ব। বারান্দায় তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। সন্ধ্যায় ফের মদ্যপান সহযোগে পিন্টুকে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয় বলে জানান তিনি। পিন্টুর কথায়, ‘‘বললাম, আমি নিইনি। কোনও কথাই শুনল না।’’
পিন্টুর দাবি, গভীর রাতের দিকে তাঁর হাতে ‘বৈদ্যুতিক শক’ দেয় অভিযুক্ত। এ দিন পিন্টু বলেন, ‘‘শক খাওয়ার পরে জ্ঞান হারাই। রাত ৩টে নাগাদ জ্ঞান ফিরলে পিছনের দিকে সাউন্ড বক্সের ফাঁকে একটা বঁটি দিয়ে দড়ি কেটে ছাদ থেকে লাফিয়ে পালাই।’’ পিন্টু জানিয়েছেন, দমদম থেকে ট্রেন ধরে তিনি শিয়ালদহে যান। সেখান থেকে সল্টলেকের একটি মন্দিরে আশ্রয় নেন। পিন্টু বলেন, ‘‘প্রথমে হাঁটাচলার মতো অবস্থা ছিল না। একটু ঠিক হয়ে দমদম পার্কে যাই। সেখানে এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা হলে ফোনে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে থানায় আসি।’’
নিখোঁজ যুবক উদ্ধার হলেও অভিযুক্ত এখনও ফেরার। পুলিশ সূত্রের খবর, শুরুর দিকে এলাকায় এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিল অভিযুক্ত। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’