‘আমি কী করেছি? কেন আমায় ধরছেন?’

কসবা থেকে রুবির দিকে ছুটে যাওয়া একটি অ্যাপ-ক্যাবকে ওভারটেক করে রাস্তা আটকে দাঁড়াল পুলিশের গাড়ি। নামতে বলা হল আরোহীকে। অদূরেই একটি শপিং মল। মাঝরাস্তায় পুলিশের সঙ্গে খানিক তর্কের চেষ্টা করলেন যুবক। বললেন, ‘‘আমি কী করেছি? কেন আমায় ধরছেন?’’ অফিসারদের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘যা বলার, থানায় গিয়ে বলবেন।’’ পুলিশের গাড়িতে উঠতে বলা হল যুবককে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

অভিযুক্ত: আলিপুর আদালতের পথে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

রাত তখন গভীর। কসবা থেকে রুবির দিকে ছুটে যাওয়া একটি অ্যাপ-ক্যাবকে ওভারটেক করে রাস্তা আটকে দাঁড়াল পুলিশের গাড়ি। নামতে বলা হল আরোহীকে।

Advertisement

অদূরেই একটি শপিং মল। মাঝরাস্তায় পুলিশের সঙ্গে খানিক তর্কের চেষ্টা করলেন যুবক। বললেন, ‘‘আমি কী করেছি? কেন আমায় ধরছেন?’’ অফিসারদের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘যা বলার, থানায় গিয়ে বলবেন।’’ পুলিশের গাড়িতে উঠতে বলা হল যুবককে।

সিনেমায় যেমন হয়, সে ভাবেই যেন বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার হলেন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুতে গোড়া থেকেই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ উঠেছিল বিক্রমের বিরুদ্ধে। গত ৩০ মে তাঁর নামে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করে পুলিশ। প্রশ্ন ওঠে, তার পরেও বিক্রম কেন অধরা? সেই টানাপড়েনে আপাতত যবনিকা পড়ল। শুক্রবার বিক্রমের ১০ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন আলিপুর আদালতের বিচারক।

বৃহস্পতিবারেই জানা যায়, হাইকোর্টে বিক্রমের আগাম জামিনের শুনানি হবে ১৩ জুলাই। পুলিশের দাবি, এর পরেই বিক্রম ধরে নেন, আপাতত তাঁর কোনও ভয় নেই। নিশ্চিন্ত মনেই সুইনহো লেনে নিজের বাড়ি থেকে সল্টলেকের কোনও বন্ধুর বাড়ির নৈশ আসরে যাবেন বলে বেরোন তিনি। পুলিশের একাংশের আবার দাবি, সাউথ সিটিতেও যাওয়ার কথা ছিল বিক্রমের। এক বন্ধুর বুক করে দেওয়া অ্যাপ-চালিত ক্যাবে ওঠেন বিক্রম। আর সেই বন্ধুর ফোনে আড়ি পেতেই বিক্রমের গতিবিধি জরিপ করছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন:চুপিসারেই বিশেষ দল গড়ে গ্রেফতার

শুক্রবার টালিগঞ্জ থানায় দেখা যায়, বিভিন্ন কাজে আসা আমজনতার সঙ্গে একতলায় বসে কথা বলছে পুলিশ। দোতলায় (লকআপ যেখানে) সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। রাতে সামান্য হাল্কা খাবার ও সকালে ডিম-পাউরুটি ছাড়া কিছু মুখে তোলেননি তারকা-কয়েদি। ছেলে আগাগোড়া বাড়িতে থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করার পরেও তাঁকে কেন ধরা হল, প্রশ্ন তুলেছেন বিক্রমের মা। পুলিশ সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দেওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই কিছু ক্ষণের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন বিক্রম।

গত ২৯ এপ্রিল নিজের গাড়িতে সোনিকাকে বাড়ি পৌঁছতে যাচ্ছিলেন বিক্রম। তার আগে তিনটি নাইট ক্লাব ঘোরেন তাঁরা। অভিযোগ, এই সময়টাতেই বিক্রম একাধিক বার মদ্যপান করেন। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ লেক মলের কাছে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সরকার পক্ষের বক্তব্য, বিক্রম কেন মদ খেয়ে অত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তা জানতে ও ঘটনার পুনর্গঠনের স্বার্থেই তাঁকে গ্রেফতার করাটা জরুরি ছিল।

সরকারি আইনজীবী সৌরেন ঘোষাল বলেন, ‘‘বারবার বয়ান পাল্টে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন বিক্রম।’’ বিক্রমের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার ও অনির্বাণ গুহঠাকুরতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আর্জি সত্ত্বেও গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সোনিকার মা-বাবার আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘পুলিশ বুঝিয়ে দিল, আইনের চোখে সবাই সমান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন