চৌবাগায় এমন ভাবেই নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। — নিজস্ব চিত্র।
খাস কলকাতা পুর-এলাকায় তপসিয়া থেকে বানতলা, সর্বত্রই ট্রেড লাইসেন্স-হীন অবৈধ চামড়া, প্লাস্টিক কারখানার রমরমা। তপসিয়া, তিলজলা, ট্যাংরায় ঘিঞ্জি এলাকায় ওই বেআইনি কারখানাগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা লেগেই থাকে। বাসন্তী হাইওয়ের পাশে চৌবাগা এলাকাও তার ব্যতিক্রম নয়। রবিবার এখানেই তড়িদাহত হয়ে প্রাণ গিয়েছে এক দম্পতির। অভিযোগ উঠেছে, একটি কারখানা এলাকায় গ্যারাজে অবৈধ ভাবে টানা বিদ্যুতের তার ছিঁড়েই এই ঘটনা।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তপসিয়া থেকে বানতলা ছেয়ে যাওয়া এই অবৈধ কারখানাগুলির বিরুদ্ধে কলকাতা পুরসভা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। পুরসভার চিফ ম্যানেজার (লাইসেন্স) ভাস্কর ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘লাইসেন্স না থাকায় চামড়া, প্লাস্টিকের ওই কারখানাগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পুরসভার নেই। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’’ যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের বুকে বেআইনি কারখানা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুরসভাই।’’
২০০৬-এর পরে ২০১৫। ২০০৬ সালে চৌবাগায় বেআইনি ভাবে টানা বিদ্যুতের তারে মৃত্যু হয়েছিল চৌবাগা বড়বাড়ির বাসিন্দা তরুণ মণ্ডলের। ন’বছর পরে রবিবার সেখানেই একই ভাবে মৃত্যু হল দিলীপকুমার মালিক ও অপর্ণা মালিক নামে ওই দম্পতির। ঘটনায় গুরুতর আহত এক মহিলা শ্রমিক অলকা বিশ্বাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকাবাসীরা জানান, বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগের প্রতিবাদে প্রশাসনকে একাধিক বার জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে খালপাড়ে অবৈধ কারখানার রমরমা বেড়েই চলেছে।
ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় ওই সব কারখানায় মিটার বসাতে সিইএসসি-র অনুমোদন মেলে না। তাই খালের ও পারের বসতবাড়ির মিটার থেকে অবৈধ ভাবে তার টেনে কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি চামড়া কারখানার কর্মচারী ইকবাল খান জানান, খালের ও পার থেকে মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুতের তার খালের এ পারে আনা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য মিটারের মালিককে টাকা দেওয়া হয়।
রবিবারের দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, খালের ও পার থেকে সার দিয়ে বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। চেহারায় কেব্ল টিভির তারের মতো। একই মিটার থেকে ১০-১২টি লাইন গিয়েছে মাকড়সার জালের মতো। বেশ কয়েকটি জায়গায় নজরে এসেছে তারের কাটা অংশও। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ‘‘অবিলম্বে খালপাড়ের কারখানাগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে ফের বড়সড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
সিইএসসি’র এক কর্তা বলেন, ‘‘চৌবাগা এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় খালের ওপার থেকে মিটারের মাধ্যমে যে ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ অভি়যুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অভিযুক্ত গ্যারাজ মালিক সুভাষ বিশ্বাসকে সোমবার গ্রেফতারের পরে আদালতে তোলা হলে ১০ তারিখ পর্যন্ত তাঁর পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।
রবিবারের দুর্ঘটনায় মৃত অপর্ণা মালিকের বাড়ি চৌবাগা বাজারের পাশেই। সোমবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা মেনকা মণ্ডল বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছেন। একই বছরে স্বামী, বড় ছেলে ও মেয়ে-জামাইকে হারানোর শোক ভুলতে পারছে না গোটা পরিবার। অপর্ণার দিদি অর্চনা বলেন, ‘‘খালপাড়ে বেআইনি কারখানার জন্যই দিদি-জামাইবাবু অকালে চলে গেলেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না হয়, তার জন্য খালপাড়ে বেআইনি কারখানাগুলি অবিলম্বে উচ্ছেদ করুন।’’